প্রতিনিধি, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দিঙ্গলকান্দি (মশিন্দা) গ্রামে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বর্বর পাক সেনাদের দ্বারা সম্ভ্রম হারা (ধর্ষিতা) স্বামী পরিত্যক্তা হাজেরা বেগমের বীরাঙ্গনা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত হয় নাই। সাম্প্রতিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই বাছাই কালে তাঁর নাম এবারও ওই তালিকায় বাদ পড়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল হক সামু জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ই নভেম্বর শনিবারটা ছিল ভয়াল ঢুলিয়ার যুদ্ধ দিবস। ওই দিন ঢুলিয়া গ্রামে এক ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। সেদিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ হোসেন শাহাদ, আমজাদ মোল্লা ও আমি ঢুলিয়া গ্রামে জুব্বার মন্ডলের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। রাজাকারদের দ্বারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্বর পাক সেনারা আমাদের হত্যার উদ্দেশ্য ওই দিন সকালে বিশাল বহর নিয়ে কদিমচিলান, মশিন্দা, দিঙ্গলকান্দি, ঢুলিয়া, দোগাছি ও চুলকাটি এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনা বুঝতে পেরে আমাদের সঙ্গে থাকা অসম্ভব সাহসী সুঠামদেহী ও যুদ্ধ কৌশলী শাহাদৎ হোসেন শাহাদ আমাকে ও আমজাদ মোল্লাকে নিরাপদে অনত্র্য সরিয়ে দেন। পাক সেনারা রাজাকারদের সহযোগিতায় বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে শাহাদ শত্রæদের লক্ষ্য করে মহুর্মূহ বন্ধুকের গুলি ছুড়তে থাকে। দেড়ঘন্টা একটা প্রানপনে যুদ্ধ করার পর তাঁর রসদ ফুরিয়ে যায়। এ সময় পাক সেনাদের গুলিতে শাহাদৎ হোসেন শহীদ হন। পরে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা সেখানে অন্তত ২০টা বাড়ি লুটপাট শেষে জুব্বার মন্ডলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ মোল্লা বলেন, শাহাদকে হত্যা করে উল্লাস করে হানাদাররা ফিরে যাওয়ার পথে দিঙ্গলকান্দি গ্রামে আরশেদ আলীর সদ্য বিবাহিতা অপরুপ সুন্দরী স্ত্রী হাজেরা বেগমকে দেখতে পায়। গাড়ি থেকে নেমে তারা পাশবিক কায়দায় হাজেরাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে সংগাহীন অবস্থায় ফেলে যায়। বর্বর হানাদাররা চলে যাবার পর প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আরশেদ আলী বাড়ি ফিরে লোকমুখে এই ঘটনা শুনার পর তাঁকে এই রাতেই বাড়ি থেকে বের করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন বাবার বাড়ি থাকার পর তিনি তালাক প্রাপ্ত হন। পরে আব্দুল লতিফ নামে অপর একজন লোকের সাথে হাজেরার দ্বিতীয় নিকাহ হয়। কয়েক বছর পরে পুরাতন সেই অপবাদ দিয়ে সেও হাজেরাকে তালাক দেয়। ইতিমধ্যে তার বাবাও মারা যান। তার নিজের কোন ঘরবাড়িও নাই। সেই থেকে হাজেরার জীবন চলে পরের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে। সামাজিক স্বীকৃতি ও জীবন জীবিকার জন্য সে অনেক বার বীরাঙ্গনা তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিবেশী অধ্যাপক দুলাল উদ্দিন হোসেন জানান, হাজেরার জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ভুল বশতঃ ০৯/০৩/১৯৫৩ স্থলে ০৯/০৩/১৯৫৯ লিখা আছে। বয়সের মারপ্যাচে হাজেরা বারবার ভাগ্য বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছেন। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সাচ্চু বলেন, ১৯৭১ সালে বিবাহিতা অশিক্ষিত হাজেরার জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখের ভুলের দায় কে নিবে? এ যেন যখন রোম পুড়ছে তখন নিরু বাশি বাজাচ্ছে! উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ওই সময়ের ঘটনার কথা আমি নিজেও শুনেছি। এ ব্যাপারে উনি নির্বাচন অফিসে গিয়ে জন্ম তারিখ সংশোধন করে আবেদন করলে তালিকাভূক্ত হতে পারবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী বলেন, ওই দিন পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক হাজেরা বেগমকে গণধর্ষণ, শাহাদকে হত্যা, এলাকায় লুটপাট ও জুব্বার মন্ডলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখনও এলাকার হাজারও মানুষ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমস্থন করে।
অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন, নাটোর জেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, নাটোর মহোদয়ের নিকট “এপ্লিকেশন টু দ্য চিফ অ্যাডভাইজার” স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বেসরকারি কলেজ সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স…