(শরণার্থী জীবনের স্মৃতিকথা ‘একাত্তরে পথে প্রান্তরে’ থেকে-)
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ক্রমে জোরদার হতে থাকে। বাঙালি জাতি অনেক উদার, তারা উর্দুর বিরোধিতা করে নি। তাদের দাবি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এটা এমন কিছু বড়ো দাবি ছিল না, অথচ এই দাবি মানাতে বাঙালিকে অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে একাধিক রাষ্ট্রভাষা আছে। সে সময় মিছিলে শ্লোগান দেওয়া হতো ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, উর্দুর সাথে বিবাদ নাই’। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্তে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। পুলিশ গুলি চালালে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত সহ বেশ কয়েকজন ছাত্র ও নিরীহ মানুষ শহিদ হন।
তখন টেলিভিশান ছিল না। সরকার নিয়ন্ত্রিত রেডিওতে এসব খবর রেখেঢেকে অথবা বিকৃত করে প্রচার হতো। খবরের কাগজ মফঃস্বল শহরে আসত একদিন পর। তখন শোকাবহ সংবাদটি জানা গেল। নাটোরে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলে আমার বড়দি নাটোর গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মঞ্জু সান্যালের (বর্তমানে ভারতের জামশেদপুর প্রবাসী) সাথে আমিও যোগ দিয়েছিলাম।
১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নাটোরে প্রথম শহিদ দিবসে দশম শ্রেণির ছাত্র গাড়িখানা মহল্লার দৌলতজ্জামান দোলা ভাইয়ের নেতৃত্বে যে মিছিল হয় তাতেও আমি ছিলাম। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। পরদিন ভাষাসৈনিক দোলাভাইকে গ্রেফতার করা হয়। একজন অসাধারণ ভালোমনের মানুষ দোলাভাই। বাঙালির সাংস্কৃতিক সংকটের দিনে নাটোরের মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন সাহসী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর অন্যতম ছিলেন বলে রাজরোষ তাঁর উপর আগে থেকেই ছিল।