নাটোরের গুরুদাসপুরের সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক গত সাত মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। ওই শিক্ষক দম্পতি গত সাত মাসে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান শিক্ষক।
সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সহকারী শিক্ষক (বায়োলজি) মো. অলিউল্লাহ ও সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) মোছা. আফরোজা খাতুন ভারতে চিকিৎসা জন্য সময় উল্লেখ না করে ছুটির আবেদন করেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় না দিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও ওই শিক্ষক দম্পতি বিদ্যালয়ে যোগদান করেনি। তবে সহকারী শিক্ষক অলিউল্লাহ তার পরিবর্তে স্থানীয় এক বেকার (এমএসসি) যুবককে পাঠদানের দায়িত্বভার দিয়ে গিয়েছেন। খণ্ডকালিন ওই শিক্ষকের বেতনও তিনিই দিবেন বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে অলিউল্লা ও আফরোজা খাতুন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। সেই সাথে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও ক্ষতি হচ্ছে। গত সাত মাস তারা উপস্থিত না থাকায় সেই বিষয়গুলোতে তেমন পাঠদান হয়নি। তা ছাড়া এখনো ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে বস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন ওই দম্পতি।
বিদ্যালয়ে অলিউল্লার পরিবর্তে খন্ডকালিন শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম (এমএসসি) জানান, ‘আমি পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতেই স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোর কিছু শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াই। অলিউল্লাহ তার পরিবর্তে সোনাবজু উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে বলে আমাকে মাসিক ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে পাঠদান করানোর কথা বলে। গত সাত মাস যাবৎ আমি পাঠদান করাচ্ছি শিক্ষার্থীদের। তবে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও এ যাবৎকাল পর্যন্ত আমি মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছি।’
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক অলিউল্লাহ ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক আফরোজা খাতুন দেশের বাহিরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ জানান, ‘বিদ্যালয়ে সাত মাস যাবৎ অনুপস্থিত দুইজন সহকারী শিক্ষক স্বামী-স্ত্রী। চিকিৎসা জনিত কারণে তারা ছুটির আবেদন করেছিলেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে বলা হয়েছিল ছুটির নির্দিষ্ট কোনো সময় দেওয়া যাবে না। অতি দ্রুত অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হবে। কিন্তু গত সাত মাস যাবৎ তারা দুইজন অনুপস্থিত। তবে বেতন-ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করছে তারা। এযাবৎ তারা প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। অলিউল্লা তার পরিবর্তে একজনকে পাঠদানের জন্য স্কুলে দিয়েছে। সেই আপাতত তার ক্লাসগুলো নিচ্ছে। এ ছাড়াও আফরোজা তার সহকর্মী দুই নারী শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।’
সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন,‘মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে স্বল্প সময়ের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেটা সাত মাসের জন্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গুরুদাসপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আকতার জানান, ‘এমন ঘটনা জানা ছিল না।তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’