নাটোরের ভেদ্রার বিলে জমি খেকোদের দৌড়াত্বে আবাদি জমি কেটে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। আবাদি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করার পাশাপাশি শুধুমাত্র খেয়ালের বশেও আবাদি জমির মাটি কেটে পুকুর বানানো হচ্ছে নাটোর শহরের অদূরে বড়হরিশপুর ইউনিয়নের জাঠিয়ান এলাকার ভেদ্রার বিলে। প্রশাসনের কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। প্রশাসন কে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে আবদি জমিতে পুকুর কেটে চলেছে নব্য জমি খেকোরা।
নাটোর শহরের পিটিআই মোড় দিয়ে দক্ষিণে বড়ভিটা পার হয়ে ভেদ্রার বিলে যাওয়া যায়। সেখানে পুরো বিল জুড়েই ধান, গম, মসুর, আখ, ভুট্টা, রসুন, পিঁয়াজ জাতীয় অর্থকরী ফসলের ভালো আবাদ হয়। এখান থেকে ফসলের আবাদ করে সারা বছরের সংসার চালান কৃষকেরা। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের মাছ চাষের ধুয়ো তুলে আবদি জমি পুকুর বানিয়ে একদিকে অন্যান্য কৃষকদের আবাদ নষ্ট করা হচ্ছে অন্যদিকে আবাদি ভালো জমিতে বছরের পর বছর ঐ পুকুরের অতিরিক্ত পানির জলাবদ্ধতার কারণে ফসলি জমিগুলো আবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
ভেদ্রার বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নাটোর শহরের মীরপাড়া এলাকার মাছের ব্যবসায়ী বাঘার ৪ বিঘা জমিতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রাতের আঁধারে পুকুর কাটা চলছে। পুকুর কাটার লিজ নিয়েছে জাঠিয়ান এলাকাতেই অবস্থিত এম, হোসেন এগ্রো ফিসারিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইমন। পুকুরটি কাটা হয় রাতে এশা ও তারাবিহ নামাজের সময় দেড় ঘন্টা ও রাত ৩ টা সেহেরির সময়। পুকুর কাটায় ব্যবহৃত ভেকু রাখা হয় ইমনের এগ্রো ফিসারিজ লিমিটেডের ভিতরে। তবে ঐ জমির আশেপাশের জমিগুলোতে এখনও ফসলের সমারোহ চোখে পড়ছে। উত্তরে পাট বোনা হয়েছে আর দক্ষিণে বোনা হয়েছে আখ।
অবৈধভাবে খনন করতে থাকা পুকুরের জমির মালিক বাঘার সাথে কথা বলে জানা যায় ৩-৪ বছর ধরে ঐ জমি থেকে কোন আবাদ পাই নাতো তাই পুকুর কাটতে দিয়েছি। জমির লিজ নিয়েছে এম, হোসেন এগ্রো ফিসারিজ লিমিটেডের সত্বাধিকারী ইমন। এখনোও পর্যন্ত কোন লিজের টাকা পাওয়া যায়নি। পুকুর কাটা হলে চুক্তি হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান ঐ জমিতে পুকুর কাটা হলে আমাদের জমিতে আবাদ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। কারন পুকুর তো গভীর হচ্ছে না। ফলে পুকুরের উপরিভাগের পানি পাড় ভেদ করে আমাদের জমিতে এসে জড়ো হবে। তখন জলাবদ্ধতার কারনে আমরা সব ফসল করতে পারবো না।
এ ব্যাপারে জাঠিয়ানের ভেদ্রার বিলের সচেতন কৃষক বাবর আলী বলেন ক্ষমতার দাপট দেখায়ে সাধারন কৃষকদের ভয় দেখায়ে আবাদি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। এভাবে পুকুর কাটতে থাকলে বিলে আর কোন ফসল হবে না তখন তো মাছই মাছ হবে। তাহলে ধান উৎপাদন কিভাবে হবে আর আমরা ভাতই খাবো কিভাবে ? শুধু মাছ খেয়ে কি আর জীবন চলবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এরকম আবাদি জমিতে প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে পুকুর কাটা অবৈধ। আর এমন তথ্য পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করে পুকুর কাটা বন্ধ করে দেই। তার জন্য জেল, জরিমানা এমনকি পুকুর কাটার যন্ত্রাংশও নিলামে বিক্রি করে দেই।
অবৈধ পুকুর খননকারীর ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড আর ৬ মাসের অজামিনযোগ্য জেল দিলে আবাদি পুকুর কাটা বন্ধ হবে বলে মনে করে নাটোরের সচেতন মহল।