স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেডের (নেসকো) বিদ্যুৎ সেবা নিয়ে গ্রাহক-অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি বেড়েই চলেছে। নেসকো প্রদত্ত স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন, মিটারের কারিগরী ত্রুটি ও গ্রাহক সেবায় নিয়েজিতদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন সেবা বিনামূল্যে প্রদানের কথা থাকলেও গ্রাহকদের থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া অদক্ষ কর্মী দ্বারা মিটার স্থাপনের কারণে মিটার অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
গত ১৬ ফেব্রæয়ারি গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নাটোরে নেসকোর আওতাধীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে গ্রাহক পর্যায়ে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোজন কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। এর পরদিন প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের প্রতিবাদ জানায় নাটোরের সর্বস্তরের মানুষ। অন্য সকল বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও এই প্রতিবাদে সমর্থন জানিয়ে মিছিল-মানববন্ধনে অংশ নেন জেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। গ্রাহকরা নেসকোর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করলে সাময়িকভাবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে নেসকো। এক সপ্তাহ পর ২৪শে ফেব্রুয়ারী আন্দোলনরত গ্রাহকদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করে নেসকো ও জেলা প্রশাসন। ওই সভায় গ্রাহকদের জানানো হয়, বিদ্যুতের প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন। তখন গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিলসহ মিটার স্থাপন পরবর্তী হয়রানি বন্ধের কয়েকটি শর্তে প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসন মেনে নেন। এরপর দুই সপ্তাহ ধরে মিটারের পক্ষে গ্রাহক সচেতনতা তৈরী করে পুনরায় স্থাপনকাজ শুরু করে নেসকো। তবে এই স্থাপনকাজে অর্থ গ্রহনের অভিযোগ নেসকোর টেকনিশিয়ানদের।
শহরের লালবাজার এলাকার নেসকোর গ্রাহক আকরাম আলী অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তার বাড়িতে নেসকোর কর্মীরা স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করতে আসে। স্থাপন শেষে তারা ২০০ টাকা দাবী করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা তর্কে জড়ায়। এরপর চরম অসহিষ্ণু মনোভাব দেখিয়ে চলে যায়।
লক্ষীকান্ত সাহা নামে আরেক গ্রাহক জানান, তার বাড়িতে মিটার স্থাপন শেষে নেসকো কর্মীরা টাকা দাবি করে। ভবিষ্যতে ঝামেলা এড়ানোর স্বার্থে তিনি ২০০ টাকা দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
গ্রাহক ফজলুর রহমান ও প্রদীপ সাহা জানান, নেসকোর মিটার স্থাপনকারীরা তাদের নিকট থেকে মিটার স্থাপনের বিনিময়ে ৩০০ ও ২০০ টাকা করে আদায় করেছেন।
এদিকে, শহরের বঙ্গজ্জ্বল এলাকায় দীপ্রমান সরকার নামে এক গ্রাহকের বাসায় সদ্যস্থাপিত ডিজিটাল মিটারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই গ্রাহকের অভিযোগ, অদক্ষ কর্মী দ্বারা মিটার স্থাপনের পর শনিবার রাত দশটায় মিটারের ভেতর থেকে তার বের হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও নেসকো কর্মীরা এসে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেসকোর একাধিক গ্রাহক জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটারিং পদ্ধতি এমনিতেই নতুন তার উপর সরকারি সিদ্ধান্তে তারা বাধ্য হয়েছেন। নেসকোর পক্ষ থেকে মিটার স্থাপনসহ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা প্রদানে যখন স্ব-প্রণোদিতভাবে সহযোগিতা প্রত্যাশিত, তখন শুধু বিনিময়ে অর্থ দাবী অপ্রত্যাশিত। অনেক গ্রাহক ভবিষ্যত হয়রানির ভয়ে চাহিদামতো টাকা দিয়েছেন।
নেসকোর সাধারণ গ্রাহকদের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী নাটোর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, ‘নেসকো এর গ্রাহকদের বাড়িতে বিনামূল্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলো। কিন্তু আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি। কিন্ত অনৈতিকভাবে কেউ টাকা নিলে নেসাোর বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নামবো।
নেসকোর প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের বিনিময়ে কোনো টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। কেউ নিয়ে থাকলে গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নেসকো’র নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল আজিম ইমান বলেন, ‘নতুন পদ্ধতি প্রবর্তনে কিছু কারিগরী সমস্যা হতে পারে। তবে সেগুলো গুরুতর কোন সমস্যা নয়। এছাড়া কোন কর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করা হবে। প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় সকল গ্রাহককে আনা হলে সেবা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকবে না।’
উল্লেখ্য, নাটোর পৌর এলাকায় নেসকোর ২৭ হাজার গ্রাহকদের বাসা-বাড়িতে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার মিটার স্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নেসকো সূত্রে জানা গেছে।