নাটোর জেলা সদরের ছাতনী ইউনিয়নের আগদিঘা গ্রাম। এই গ্রামটি দ্বিতীয় মুজিবনগর নামে অনেকের কাছে পরিচিত। এই গ্রামের শতভাগ মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহব্বানে ১৯৭১ সালে দেশ রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়াসহ বিভিন্নভাবে অবদান রাখেন। পাশাপাশি এই গ্রামের শতভাগ মানুষ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের পক্ষে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এই গ্রামের গমীর মন্ডলের বাড়ি। এই ক্যাম্পে প্রায় ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেয়। গমীর মন্ডলের স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েসহ পরিবারের সকলেই, ক্যাম্পের কমান্ডার, প্রশিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীণ দীর্ঘ ৪ মাস রান্না করে খাওয়ানো, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাসহ সার্বিক সহযোগীতা করেছিলেন। পাশাপাশি গমীর মন্ডলের চার ছেলে সক্রিয়ভাবে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৮৭ সালে গমীর মন্ডল মারা যাওয়ার ৮ বছর পর মারা যায় তার স্ত্রী রূপজান বেওয়া। তাদের চার ছেলের মধ্যে মৃত সাদেক আলী মন্ডল, মৃত নজিরউদ্দিন মন্ডল ও আব্দুস সামাদ মন্ডল মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও আরেক ছেলে আব্দুস সাত্তার মন্ডলের ভাগ্যে আজও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সম্মাননা বা স্বীকৃতি। এদিকে বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়েছে আব্দুস সাত্তার মন্ডল (৭৮)। প্রায় ১৫ বছর আগে শিমুল গাছ থেকে তুলা পাড়তে গিয়ে পা পিছলে মাটিতে পড়ে গুরুতর আহত হ’ন তিনি। এই দূর্ঘটনার পর কোমড় থেকে পায়ের তালু অবধি অচল হয়ে পড়ে তার । অপরদিকে ১০ বছর আগে স্ত্রী সোহাগী বেগমের (৬৮) চোখের অপারেশন করতে গিয়ে দুচোখই অন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে অসহায় ও প্রতিবন্ধি হয়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন এই দম্পত্তি।
আগদিঘা গ্রামে সরেজমিনে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ছবেদ আলী সেখ, মনিরুদ্দিন সরদার, হাবিবুর রহমান মুসল্লী, জেহের আলী প্রধান, কাইমউদ্দিন খান, আয়ুব আলী হাজরা সহ আশে-পাশের ২২/২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় তারা বলেন, আব্দুস সাত্তার মন্ডল ও তার স্ত্রী সহ মৃত গমীর মন্ডলের পরিবারের প্রত্যেক নারী-পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছিলো তাতে সকলকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া দেশ ও সরকারের মানবিক দায়িত্ব ছিলো কিন্তু মৃত গমীর মন্ডলের তিন ছেলেকে এই স্বীকৃতি দিলেও কোন এক ভুলে বা সঠিক যোগাযোগ না ঘটায় বাদ পড়ে যায় আব্দুস সাত্তার মন্ডল।
ছাতনী ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন আক্ষেপের সাথে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আব্দুস সাত্তার মন্ডল সরাসরি অংশ নেন। ৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে রাজাকারদের গোপন সভায় হানা দিয়ে ৯ রাজাকারকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখেন ওই আব্দুস সাত্তার মন্ডল সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকার হত্যার পর যেনো পাক বাহিনী গ্রামে হামলা করতে না পারে জন্য পাশবর্তী হোজা নদীর পারে অস্ত্র নিয়ে দিন-রাত অবস্থান নিয়েছিলেন আব্দুস সাত্তার মন্ডল ও সহ-যোদ্ধারা।
এছাড়া আব্দুস সাত্তার মন্ডলের স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যেভাবে রাত-দিন রান্না করে খাওয়ানো, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেবা করেছেন তাতে তাঁকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া দেশ ও সরকারের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।
একই ইউনিয়নের পন্ডিতগ্রামে মেয়ের বাড়িতে কথা হয় আব্দুস সাত্তার মন্ডল ও তার স্ত্রীর সাথে। নিথর পা এলিয়ে দিয়ে বসে থাকা বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার মন্ডল কাঁপা কন্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে যুদ্ধ করেছিলাম, তাই কোন ভাতা নয়, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’ – শুধু এইটুকু স্বীকৃতি “মানবতার মা মুজিব কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা” আমাকে দিলে আমি মরেও শান্তি পেতাম। স্ত্রী সোহাগী বেগম তখন সেই দীর্ঘ ৪ মাসের কষ্ট ও ত্যাগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার অন্ধ দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে রংহীন পানি ।
আজ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর হাজার হাজার স্বাধীনতা বিরোধী ‘রাজাকার’দের নামের তালিকা প্রকাশ হলেও যাঁরা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান, যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনছেন, অথচ রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি! আদোও কি তারা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাবে? নাকি লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যাবে? নাকি বুক চাপা কষ্টে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে পরপারে গিয়ে বলবে- হে দেশ মাতা! আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছি, তাই আজ তুমি “বাংলাদেশ”।
অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন, নাটোর জেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, নাটোর মহোদয়ের নিকট “এপ্লিকেশন টু দ্য চিফ অ্যাডভাইজার” স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বেসরকারি কলেজ সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স…