স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরের গুরুদাসপুরে মা’কে বেল্ড দিয়ে শ্বাসনালী কেটে হত্যাকারী সন্দেহে কিশোরী কন্যাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্তকে হাজির করে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
হত্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গুরুদাসপুর উপজেলার উত্তর নাড়ীবাড়ী এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৬০) এর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় সেলিনা খাতুনের অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া ছোট মেয়ের অস্বাভাবিক আচরণ ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তায় সন্দেহ হয় পুলিশের। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মা’কে বেøড দিয়ে শ্বাসনালী কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ৩ মাস আগে মালয়েশিয়া প্রবাসী খালাতো ভাই সোহেলের সঙ্গে ববির বিয়ে হয়। স্বামী দেশে ফেরার আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দেয় ববি। কিন্তু মা সেলিনা তাতে পাত্তা না দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। এমনকি মরতেও বলত। তিনি আরও বলেন, তাই বিরক্ত হয়ে সোমবার (২২ মার্চ) বিকেলে নিজের মাকে বেøড দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে ববি। হত্যার পরপরই এএসপি সার্কেল জামিল আখতার ও গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
পুলিশ সুপার বলেন, এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে ববির ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে তার মায়ের সব গহনা ও ১৬ হাজার ৭০০ টাকাসহ হত্যাকন্ডে ব্যবহৃত ব্লেড উদ্ধার করা হয়। তখন ববিকে সন্দেহমূলকভাবে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় ববি আক্তার পুলিশকে বলেন, তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিন শিলাকে নিয়ে ওইদিন কাপড় কিনতে চাঁচকৈড় বাজারে যাই। এরআগে মাকে গলা কেটে হত্যা করি। বাজার থেকে ফিরে এসে ‘কে বা কারা তার মাকে খুন করেছে’ বলে নাটক সাজিয়ে কান্না শুরু করে চাচাদের নাম বলতে থাকি। এ সময় পুলিশ তার ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে মায়ের গহনা ও কিছু টাকা পায়।
নিহত গৃহবধূর স্বামী স্বামী নজরুল ইসলাম জানান, চাকরির কারণে প্রতিদিনের মতো গতকালও সকালে চলে যাই। মেয়ে ববি বাসায় ছিল। সোমবার সন্ধ্যার পূর্বে তিনি ফোনে হত্যার খবর পান।
স্থানীয়রা জানায়, স্বপ্না ও ববি দুই বোন। স্বপ্নার বিয়ে হয়েছে অন্যত্র। এরআগেও ববির বিয়ে হয় তার ফুফাতো ভাই সোহেলের সঙ্গে। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার প্রবাসী খালাতো ভাই আরেক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
এদিকে বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিন শিলা বলেন, তিনি বাজারে যেতে চাননি। তাকে অনেক আকুতি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসার পর তার ‘মাকে কে যেন খুন করেছে’ বলে চিৎকার করতে থাকে ববি।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আরও বলেন, নিজ মেয়ে তার মাকে গলা কেটে হত্যা করে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করি। সিআইডি টিম আমাদের সহযোগিতা করে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, মেয়ে তার মাকে হত্যা করে।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে ববি তার মায়ের কাছে স্বামীর জন্য মোটরসাইকেল কিনতে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে মা-মেয়ের ঝগড়া বিবাদ হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেল ৫টার দিকে বেøড দিয়ে মাকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি।