গুয়াহাটিতে রবীন্দ্রনাথ যে-বাড়িতে ছিলেন
………….প্রশান্ত চক্রবর্তী
১৯১৮ সালের এপ্রিলের শেষ। অসমের অন্যতম সুসন্তান ইতিহাসবিদ তরুণ পণ্ডিত সূর্যকুমার ভূঞা সস্ত্রীক কলকাতা গেছেন। তাঁর উচ্চশিক্ষাজীবন কলকাতায় কেটেছে। তিনি রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত গুণমুগ্ধ ভক্ত। কবির ছদ্মনাম ছিল ‘ভানুসিংহ ঠাকুর’। সূর্যকুমারও নিজের নাম রেখেছিলেন ‘ভানুনন্দন’। সেই সূর্যকুমার ২৮ এপ্রিল জোড়াসাঁকোয় গিয়ে কবির সঙ্গে দেখা করেন। সূর্যকুমারের জীবনীকার নন্দ তালুকদার লিখেছেন : “আলাপ আলোচনার মাঝখানে কবি তাঁর বহু দিনের অসম-ভ্রমণের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। কামাখ্যা ভ্রমণের সঙ্গে গুয়াহাটি থেকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত জাহাজে ভ্রমণ করার ইচ্ছের কথাও বললেন।”(অসমিয়া থেকে অনূদিত)। সূর্যকুমার কবিকে অসমের অতীত ঐতিহ্য, রীতিনীতি, কথিত ভাষা, প্রাগজ্যোতিষপুরের প্রাচীন জ্যোতিষ চর্চা, বিহুগীত ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আলোচনা চলল। সূর্যকুমার কবিকে তাঁর লেখা ‘নির্মালি’ কাব্যগ্রন্থটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ১৮ মে কবি এক চিঠিতে সূর্যকুমারকে লিখলেন : “প্রাগজ্যোতিষপুরে আপনার সাদর আমন্ত্রণ পাইয়া আনন্দিত হইলাম। সেখানে যাইবার বিশেষ ইচ্ছা আছে, কবে কোথায় ঘটিবে নিশ্চয় বলিতে পারি না।” ভবদীয়~রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এই চিঠির বছর দেড়েক পরেই কবি প্রথম গুয়াহাটি এলেন। ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর। সঙ্গে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দিনেন্দ্রনাথের স্ত্রী কমলা দেবী।
গুয়াহাটিতে কবির পরিবারের বৈবাহিকসূত্রে আত্মীয় ছিলেন স্বনামধন্য জ্ঞানদাভিরাম বরুয়া– ‘আসামবন্ধু’ পত্রিকার সম্পাদক গুণাভিরাম বরুয়ার সুপুত্র। তিনি কবির ভাইপো অরুণেন্দ্রনাথের কন্যা লতিকাকে বিয়ে করেছিলেন ১৯০৬-এর ১ জুলাই। অর্থাৎ~জ্ঞানদাভিরাম ছিলেন কবির নাত-জামাই।
কবি কিন্তু এই ভ্রমণবার্তা শুরুতে জ্ঞানদাভিরাম বা সূর্যকুমারকে জানাননি। ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে গোয়ালন্দগামী জাহাজের কেবিনে কোনোক্রমে রাত্রিযাপন করে সরাসরি শিলং চলে গিয়েছিলেন ১১ অক্টোবর, পরদিন।
শিলং পাহাড়ে কিছুদিন থেকে কবি ৩১ অক্টোবর বিকেলে নেমে এলেন গুয়াহাটিতে। এবারে তিনি এসে উঠলেন নাতিনজামাই জ্ঞানদাভিরাম বরুয়ার সরকারি বাংলোয়। জ্ঞানদাভিরাম তখন আর্ল ল কলেজের প্রিন্সিপাল। আর্ল সাহেবের পুরো নাম Sir Archdale Earle। ইনি অসমের চিফ কমিশনার হয়ে ১৯১২-তে অবসর গ্রহণ করার পর ১৯১৪-তে তাঁর নামে অসমে প্রথম আইন মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয় কটন কলেজের(বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) চৌহদ্দিতেই। এবং সেই ল-কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল বিলেতফেরত জ্ঞানদাভিরাম।
এই সরকারি বাড়িটিকে লোকে বলত ‘জ্ঞান বরুয়ার হাউলি’। অসমিয়া ‘হাউলি’ মানে হিন্দির ‘হাবেলি’~অভিজাত মানুষের বাসগৃহ। জ্ঞানদাভিরামের এই সরকারি বাসগৃহটি পুরনো আসামটাইপে নির্মিত। অত্যন্ত সুন্দর, ছবির মতো একটি বাড়ি ছিল। ১৮৯৭-এর প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে গুয়াহাটির অধিকাংশ ঐতিহ্যমণ্ডিত পুরাতন বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই বাড়িটিই তাই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের থাকার জন্য বিবেচনা করা হত। আর আইন কলেজের প্রিন্সিপালের বাংলো রূপে এর একটি মর্যাদাও ছিল। রবীন্দ্রনাথের অসম-ভ্রমণের এক আগের বছর ১৯১৮-র ১৭ মার্চ গুয়াহাটিতে পত্নী যোগমায়া দেবী সহ এসেছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। সেটি সরকারি ভ্রমণ ছিল। ভারত বিখ্যাত ‘স্যাডলার কমিশন’-এর হয়ে কটন কলেজ পরিদর্শনে তিনি আসেন আশুতোষ। সূর্যকুমার ভূঞার জীবনীকার নন্দ তালুকদার জানিয়েছেন আশুতোষ এই বাড়িটিতেই রাত্রিবাস করেছিলেন। (সূর্যকুমার ভূঞা, পৃ. ৯৩)। ১৯২০-এ শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথও এখানে থেকে গেছেন। বঙ্গের বিখ্যাত স্বদেশী চারণকবি মুকুন্দদাস এই বাড়ির চৌহদ্দিতেই তাঁর বিখ্যাত যাত্রাপালা গেয়ে গেছেন। পরবর্তীকালে ১৯৩৫-এ জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা যখন প্রথম অসমিয়া ‘জয়মতী’ নির্মাণ করেন, তখন সেটার ল্যাবরেটরির কাজ এই বাড়িতেই করেছিলেন। শুধু তাই নয়, জ্যোতিপ্রসাদের দ্বিতীয় ছবি ‘ইন্দ্রমালতী’-র শুটিং এই ঐতিহ্যমণ্ডিত গৃহেই হয়েছিল। এবং সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন স্বয়ং জ্ঞানদাভিরাম। আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের অন্যতম পুরোধাপুরুষ তথা ঠাকুরবাড়ির জামাতা সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া হাওড়া ও সম্বলপুর থেকে গুয়াহাটি এলে এই বাড়িতেই থাকতেন। (‘Heritage Guwahati’, Dr. Dipankar Banerjee, Published by : District Administration Guwahati Metropolitan, 2004)
সুপ্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পড়ার পর আপনার নিশ্চয় কৌতূহল হচ্ছে, বাড়িটি কি এখনও আছে? এবং যদি থেকেই থাকে, তাহলে সেটি কোথায়?
রবীন্দ্রনাথ যে এই বাড়িতেই ছিলেন সেটা স্পষ্ট করে লিখে গেছেন অসম সাহিত্যসভার অন্যতম প্রাক্তন সভাপতি বিশিষ্ট অসমিয়া সাহিত্যিক অতুলচন্দ্র হাজরিকা। তিনি লিখেছেন : “না-বললেও হবে, তিনবারই বেজবরুয়া ডাঙরিয়া ছিলেন তাঁর আদরের ‘জ্ঞানবোপা’র (জ্ঞানদাভিরাম বরুয়ার) অতিথি হয়ে ল কলেজের প্রিন্সিপাল সাহেবের বাংলোয়। এই বাংলোটি এখন কটন কলেজের ছাত্রীনিবাসের ভারপ্রাপ্ত মহিলা অধ্যাপিকার বাসস্থানে পরিণত হয়েছে। এই বাংলোতেই একদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও অতিথি হিসেবে ছিলেল।”(অসমিয়া থেকে অনূদিত)(‘স্মৃতির পাপরি’, অতুলচন্দ্র হাজরিকা, পৃ. ২৮)।
৩১অক্টোবর ১৯১৯, বিকেলে রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িতে ওঠার পর গুয়াহাটি তথা অসমের গুণিজন, কবির গুণগ্রাহী বিদ্বৎসমাজ নোবেলজয়ী কবির নিবিড় সান্নিধ্যলোভে ভিড় জমাতে থাকেন। কবি এখানে মোটামুটি তিনদিন ছিলেন। ৩ নভেম্বর তিনি গুয়াহাটি থেকে রেলপথে চাপারমুখ লামডিং করিমগঞ্জ হয়ে সিলেট ভ্রমণে যান।
যিনি প্রাগজ্যোতিষপুরে কবিকে প্রথম আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেই সূর্যকুমার ভূঞা থাকতেন কাছাকাছিই। ফলে তিনি তো ছুটে এসেছিলেনই, তা-ছাড়া অসমের বহু বিখ্যাত মানুষ এই তিনদিন কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এঁদের মধ্যে বেণুধর শর্মা, হেম বরুয়া, ভগবতীপ্রসাদ বরুয়া, হেমচন্দ্র গোস্বামী, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, বাণীকান্ত কাকতি, ভোলানাথ দাস(যিনি মাইকেলের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’র অনুকরণে অসমিয়াতে একটি চমৎকার কাব্য লিখে গেছেন), দুর্গানাথ বরুয়া, সত্যনাথ বরা প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন। আর তৎকালীন গুয়াহাটির বাঙালি সমাজের কালীচরণ সেন, মহেন্দ্রমোহন লাহিড়ি, সত্যভূষণ সেন থেকে শুরু করে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, গুয়াহাটি শাখার কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আর কটন কলেজের লক্ষ্মীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, ভুবনমোহন সেন প্রমুখ বাঙালি অধ্যাপকেরা তো ছিলেনই।
সভাসমিতি ছিল বেশ কয়েকটি। কবি বাকি অবসরটুকু এই বাড়িতে কাটিয়েছিলেন বিখ্যাত অসমিয়া অভিধান ‘হেমকোষ’-এর পাতা উল্টেপাল্টে। অসমকেশরী অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরীর সঙ্গে কবির সাক্ষাৎ হয়েছিল এই বাড়িতেই। অম্বিকাগিরি লিখেছেন : ” ইং ১৯১৯ সন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুয়াহাটি এসে তখনকার আর্ল ল কলেজের প্রিন্সিপাল জ্ঞানদাভিরাম বরুয়ার আতিথ্য স্বীকার করেন। পূর্ব-নির্ধারিত সময়ে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। জে. বরুয়া, কবির অভিপ্রায় অনুসারেই আমাকে একটি বরগীত গাইতে বললেন। আমি গাইলাম মহাপুরুষ মাধবদেবের কৌ রাগের ‘প্রাণনাথ নকরা বঞ্চিত’ বরগীতটি। চোখ বন্ধ করে রবীন্দ্রনাথ পুরোটা শুনলেন। গান শেষ হবার পরেও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে তারপর চোখ খুললেন। আমি বললাম–এই হল শ্রীমন্ত শঙ্কর-মাধব দুজন মহাপুরুষের আমাদের দেওয়া বরগীত আর তার সুর। ঠাকুরের অভিমত জানতে চাইলাম। ঠাকুর বললেন–‘ভালোই তো’। আর কিছু বললেন না। ঠাকুরের মুখে গভীর ভাব। হয়তো বরগীতের মাধুর্য তাঁর প্রাণ স্পর্শ করেছিল।” (অসমিয়া থেকে অনূদিত; অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী রচনাবলি, পৃ. ৬)
কবির সঙ্গে অম্বিকাগিরির অসমিয়া জাতির নানা প্রসঙ্গে অত্যন্ত মূল্যবান কিছু আলোচনা হয়েছিল সেদিন। তিনি লিখছেন কবির মতে–“এই বৃহৎ ভারতের সমস্ত অধিবাসী এক বৃহৎ সম্মিলিত জাতির অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রত্যেক প্রদেশেরই একেকটি বিষেশত্ব আছে। সেই বিশেষত্বগুলোর মধ্যে নিজ নিজ প্রদেশের সামাজিক রীতিনীতির বাইরেও নিজে নিজের মাতৃভাষা রয়েছে। সব দিক দিয়ে সেই বিশেষত্বগুলো সজীব রেখে জাতীয় জীবনের পূর্ণতা সম্পাদন করলে তবেই ভারতের বৃহৎ সম্মিলিত জাতীয়তার অঙ্গও পূর্ণ হবে।~একটি ফুলের সবকয়টা পাপড়ি পূর্ণভাবে পুষ্ট না-হলে সম্পূর্ণ ফুলটি আমরা পাইনে।”(অনূদিত)।
উল্লেখ্য যে, অসমিয়া ভাষা বাংলার উপভাষা—এইরকম একটি ধারণা বঙ্গদেশে চাউর হয়েছিল সেইসময়। এরজন্য দায়ী ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থের লেখক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটে অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন। তিনি তাঁর ওই বইয়ে সরাসরি এই দাবি করেছিলেন ১৮৯৬-এ : “কিন্তু যে যুগের ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস আমি লিখিতেছি, তখন আসামীভাষা [অসমিয়া] বঙ্গভাষা হইতে পৃথক ছিল না।…আসামের ভাষাকে আমরা বঙ্গভাষার প্রাদেশিকভেদ ভিন্ন স্বতন্ত্র ভাষা বলিয়া স্বীকার করি না।” (বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, নবম সং পৃ. ১৫২)। দীনেশবাবুর বইটি পড়ে নিজে পত্রিকায় আলোচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ফলে তাঁর মধ্যেও অসমিয়া ভাষা সম্পর্কে ভুল ধারণটাটি সংক্রমিত হয়েছিল। এবং তিনি ‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘ভাষাবিচ্ছেদ’ নামে একটি নিবন্ধও লিখেছিলেন(৭ভাদ্র, ১৩০৫, ইং ১৮৯৮)। পরে কবি তাঁর ভুল ধারণা থেকে সরে আসেন এবং অসমিয়া ভাষা-সাহিত্য প্রসঙ্গে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি জানান। অম্বিকাগিরি সুযোগ পেয়ে কবির এই বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। কবি বলেছিলেন : “অসমিয়া জাতির নীতি,নীতি, ভাষা, সমাজ সম্বন্ধে আমি এখনও আলোচনা করিনি। ফলে এই বিষয়ে কোনো স্থির মত প্রকাশ করাটা এই মুহূর্তে আমার উচিত বলে বিবেচনা করি না। বাস্তবক্ষেত্রে অসমিয়া জাতির যদি এরকম স্বাধীনতা আছে, তাহলে সেই জাতির অন্য জাতির প্রভাবে নিজে অস্তিত্ব বিলোপ করতে দেওয়া উচিত হবে না।”
কবি অসমিয়া জাতির স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গুয়াহাটির বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কর্মকর্তাদের বলেছিলেন—বাংলা ভাষায় অসমিয়া ভাষার পুরনো পুঁথি, ইতিহাস, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লিখতে।
এই বাড়ির সামনেই অসমের সাহিত্যিক বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কবি গ্রুপ ফটোও উঠেছিলেন বলে অনুমান করা হয়।
তবে কবি কামাখ্যা-ভ্রমণের ইচ্ছেটি সূর্যকুমারকে বললেও কবি কামাখ্যা যাননি। যদিও তাঁর জন্মের আগে তাঁর পিতৃদেব দেবেন্দ্রনাথ ১৮৪৯-এ কামাখ্যা ভ্রমণে এসেছিলেন। কবি কামাখ্যা না-যাওয়ার কারণ সম্ভবত বলি প্রথা–যার বিরুদ্ধে তিনি বরাবর সরব ছিলেন।
এখানে আরও একট্য তথ্য দিই। জ্ঞানদাভিরাম বরুয়ার মেয়ে ইরা বরুয়ার বিয়ে হয় ঠাকুর পরিবারের ভিন্ন শাখায়। ইরার মেয়েই অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। অর্থাৎ শর্মিলা জ্ঞানদাভিরামের নাতনি। উইলিয়ামসন মেগরের পুরস্কার গ্রহণ করতে শর্মিলা গুয়াহাটি এসেছিলেন কয়েক বছর আগে। পুরস্কারটি প্রদান করেন ভারতের তদানীন্তন মহামহিম রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মেগরের জুরি হিসেবে আমিও আমন্ত্রিত ছিলাম। অনুষ্ঠানের শেষে শর্মিলা ঠাকুরকে পেয়ে এই বাড়িটির কথা বলেছিলাম। তিনি নস্টালজিক হয়ে বলেছিলেন–“ছোটবেলা মায়ের সাথে দাদুর এই বাংলোয় গেছি অনেকবার। প্রচুর স্মৃতি রয়েছ।”
কবির পুণ্যস্মৃতিধন্য এই গৃহটি আজও আছে গুয়াহাটির ঠিক মাঝখানে দিঘলি পুখুরির পুব পাড়ে কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস হোস্টেলের ক্যাম্পাসে। এটিকে গুয়াহাটির মেট্টোপলিটান অথরিটি ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ ঘোষণা করেছিল ২০০৪-এ। গত বছর ভারত সরকারের ঐতিহ্য সংরক্ষণ আইনের অধীনে অসম সরকার এক অধিসূচনাযোগে বাড়িটিকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে সেটিকে কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সংস্কার করা হচ্ছে।
প্রশান্ত চক্রবর্তী,
বিভাগীয় প্রধান (বাংলা বিভাগ)
কটন বিশ্ববিদ্যালয়,
গুয়াহাটি, ভারত।