নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় বিরোধ মীমাংসা ও মেয়াদোত্তীণ জেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে এবার বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। আর এ ব্যাপারে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকায় ডেকেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
আজ (১০ মার্চ) জেলা আওয়ামীলীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এই প্রতিবেদককে জানান আগামিকাল বুধবার (১১ মার্চ) সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় প্রধান কার্যালয়ে এই সভায় অনুষ্টিত হবে। এতে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
সভায় দলের বিরোধ মীমাংসা, মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগদানের জন্য নেতাকর্মীরা ইতি মধ্যেই অনেকে ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন এবং বাঁকিরা ঢাকার পথে রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালে নাটোর শহরের কানাইখালী মাঠে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আব্দুল কুদ্দস এমপিকে সভাপতি এবং শফিকুল ইসলাম শিমুলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছর মেয়াদী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কমিটি গঠিত হয়। ২০১৭ সালে সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইতো মধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে।
এদিকে গত বছর জেলা আওয়ামী লীগের দুটি বর্ধিত সভা হলেও দলীয় বিরোধ মীমাংসা হয়নি। বরং দিন দিন বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্য প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে নাটোরের চারটি আসনেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যেদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধ শুরু হয়। এই বিরোধ ২০১৯ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকট আকার ধারণ করে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রার্থীদের বিরোধিতা করলে এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। সে সময়কার রাজশাহী অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলকে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস তা অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃনমূলের যে সকল নেতা-কর্মী নৌকার ভোট করেছিলেন তাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করেন। এ দুই উপজেলায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের নির্দেশেও কমিটি গঠিত হয়েছে। যা তিনি ইতি মধ্যে অনুমোদনও দিয়েছন।
এদিকে ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর নাটোর শহরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এবং দলের ইউনিয়ন ও পৌর কমিটির কাউন্সিল করা নিয়ে আবারো দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকায় বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সম্মেলনের আগেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিরোধ মীমাংসা করবেন বলে আশা করি।