একটি কলাকে চার টুকরা করা হয়েছে। আর প্রতি টুকরার দাম রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কলার দাম ধার্য হয়েছে ২০০ টাকা। শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির আশায় এই কলা প্রতিজন এক টুকরা করে খাচ্ছেন। কালীপূজার রাতে অমাবস্যার সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত এই কলা খেতে দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা এসে ভীড় জমিয়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার শ্বালেশর গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে। কবিরাজ মিজানুর রহমান বছরের এক দিন কলার সঙ্গে স্বপ্নে দেখা ‘গাছগাছড়া’ দিয়ে এই কথিত চিকিৎসা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর এক টুকরার দাম ৩০ টাকা অর্থাৎ প্রতি কলা ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবছর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে কলার দামও বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে উপজেলার গোপালপুর গ্রামের স্বামী আবু বকরের বাড়িতে পারুল বেগম (৬০) নামে এক নারী বছরের এক দিন কলার সঙ্গে ‘গাছগাছড়া’ দিয়ে ‘কলাচিকিৎসা’ করতেন। তিনি উপজেলার এবি ইউনিয়নের কলসনগর গ্রামের সবিউল্লাহর মেয়ে। কিন্তু ‘কথিত চিকিৎসায়’ প্রশাসনিক বাধার কারণে গত চার বছর ধরে তিনি বাবার বাড়ি কলসনগরে ‘কলাচিকিৎসা’ দিচ্ছিলেন। এছাড়া উপজেলার গোপালপুর বাজার এলাকায় মাইকেল নামের এক ব্যক্তি একই ‘চিকিৎসা’ দেন।
রোববার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তির আশায় এই কলা খেতে এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার কয়েক শ মানুষ ভিড় করেছেন উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের শালেশ্বর গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে। কবিরাজ মিজানুর রহমানের নিজ বাড়ি কলসনগর গ্রামে প্রশাসনিক ঝামেলার শঙ্কায় পার্শ্ববর্তী এই গ্রামে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানা যায়। আব্দুল মতিন সম্পর্কে কবিরাজের মিজানুর রহমানের দুলাভাই। একই অবস্থা গোপালপুর সবজি বাজারে কবিরাজ মাইকেলের বাড়িতে।
এবিষয়ে কবিরাজ মাইকেল বলেন, আমি এই গাছটা স্বপ্নে পেয়েছি। এই গাছ কলার সঙ্গে আমাবশ্যার রাতে খেলে শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ ভালো হয়। এজন্য শুধু আজকে রাতেই এপযন্ত ১৪শ থেকে ১৫শ রোগীকে এই চিকিৎসা নিয়েছেন।
কবিরাজ মিজানুর রহমান বলেন, আমাবশ্যার রাতের সাথে অনেক কিছু জড়িত আছে। গাছগাছড়ার সাথে বছরে একবার এই কলাচিকিৎসা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী রোগীদের এই জিনকলা, হাঁসের মাংস আর হাঁসের ডিম সারা জীবনে আর খাওয়া যাবে না। উপকার পাওয়া বা না পাওয়া আল্লাহর ইচ্ছা। তবে উপকার না হলে এত দূর থেকে মানুষ কেন আসবে? অবশ্যই উপকার পাচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর গ্রামের সোহেল রানার স্ত্রী জান্নাতুল বেগম বলেন, ভেতরে গাছ দিয়ে একটা জিনকলার চার ভাগের এক ভাগ খাওয়ানো হচ্ছে। এক টুকরা কলার দাম ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
শ্বাস কষ্টের রোগী পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা আজগর আলী ও শালেশ্বর গ্রামের ইন্তাজ আলী বলেন, কবিরাজ অমাবস্যার (কালীপূজার দিন) সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত রোগীদের এই কলাচিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে তিন বছর এই কলাচিকিৎসা নিতে হয়।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এম এ হাসান বলেন, কলার সঙ্গে গাছগাছড়া খেলে শ্বাসরোগ ভাল হয় এমন তথ্য প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নয়। ভিত্তিহীন এ ধরণের চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, কথিত কলাচিকিৎসার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তা বন্ধ করা হয়েছে। গোপনে আবারও এই অপচিকিৎসার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে