প্রেম করে পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করে তমা খাতুন (১৪) ও মাহবুব হোসেনের (১৮)। বিয়ে প্রায় ছয় মাস পর শুক্রবার(১৪ জুলাই) বিকেলে স্বামীর বাড়ি থেকে কিশোরী তমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করল পুলিশ। এভাবেই এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রেমিক যুগলের সংসারের পরিসমাপ্তি ঘটে নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের চৌমুহান গ্রামে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের কুশমাইল গ্রামের তাইদুল ইসলামের মেয়ে তমা খাতুন। উপজেলার নগর ইউনিয়নের চৌমুহান গ্রামের আফসার আলীর ছেলে মাহবুব হোসেনকে ভালোবেসে ছয় মাস আগে তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়েতে সম্মতি ছিল না দুই পরিবারের। তবে কিছুদিন মেনে নেয় উভয় পরিবার। বিয়ের পর থেকে তমা স্বামীর বাড়িতেই থাকত। স্বামী ছিলেন বেকার। খুবই কষ্টে দিন চলছিল তাদের।
সাংসারিক বিষয় নিয়ে আজ সকালে তমা ও মাহবুবের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহবুব বাজারে যায়। কিছুক্ষণ পর পরিবারের লোকজন তমার খোঁজ করতে তার ঘরে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের তিরের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন তমাকে। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তমার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
তমার মা গোলাপী বেগম বলেন, ‘তারা আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে জানাজানি হলে দুই পরিবার মিলে মেনে নিই। তখন কোনো কিছু দাবি করা হয় নাই। কিছুদিন পর মাহবুবের মা ও বড় ভাই মহসীন যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। আমি গত ঈদের আগে আসবাবপত্র কিনে দিয়েছি। কিন্তু তারা টাকার জন্য বলত। টাকা না দিলে মেয়েকে মারপিটের হুমকি দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে ১১টার সময় আমার মেয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তখন বলেছিল, বসার টুল নিয়ে আমার মেয়েকে বকাবকি করছে। এরপর থেকে আমার ফোন আর রিসিভ হয় নাই। আমি ১টার দিকে আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর পাই।’
ঘটনার পর থেকেই তমার স্বামী মাহবুবকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না। মাহবুবের মায়ের দাবি, তমা ও মাহবুব আলাদা সংসার করে। ঘরে ভেতরে গ্যাসের চুলায় রান্না করে। তাদের ভেতরে কী হয়েছে তাঁরা জানেন না।
মাহবুবের বড় ভাই মহসীন বলেন, ‘দাম্পত্যে কলহে আত্মহত্যা করেছে। আমি কখনো যৌতুকের জন্য কোনো কথা বলি নাই।’
তমার বাবা তাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।’
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক আবু সিদ্দিক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।’