স্বপ্নের খোজে,যেখানে আপনার একটা স্বপ্ন আছে
———- বিদ্যুৎ কুমার রায়
১. যখনই পরিকল্পনা কমিশন এর পাশ দিয়ে বাসে মিরপুর যাইতাম বা মিরপুর থেকে আসতাম তখনই পরিকল্পনা কমিশন এর দেয়ালে একটা লেখা আমার চোখে পড়ত সেটা হলো
“যেখানে আপনার একটা স্বপ্ন আছে”
কখনোই মাথায় আসে নাই যে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য এখানে আসতে হবে। আজ অফিসের একটা কাজ টিচার ট্রেনিং এবং ফিউচার লিডার ট্রেনিং এর অনলাইন ট্রেনিং এর পারডিয়াম দেওয়ার একটা কাজের জন্য এই পরিকল্পনা কমিশন এ আসলাম। পরিকল্পনা কমিশন এর ১ নং বিল্ডিং এর তিন তলায় আর্থ সামাজিক ইউনিটে কাজ শেষ করার পর নিচে নেমে আসলাম। নিচে নেমে দেখলাম প্রচন্ড বৃষ্টি। কখন বৃষ্টি ছাড়বে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কি করা যায়! হঠাৎ আমার একটি কথা মনে পড়ল পরিকল্পনা কমিশন এর গায়ে তো লেখা দেখেছি যে যেখানে আপনার একটা স্বপ্ন আছে। দেখি তো আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি কিনা? আমার তো স্বপ্ন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হবে যাতে আমেরিকা কানাডা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনুকরণ করার জন্য বাংলাদেশে আসবে। আমার স্বপ্নের কথা কত মানুষকে বলেছি। সবাই আমাকে পাগল বলেছে। দেশের প্রতিথযশা মন্ত্রী, এমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কখনো এ কথা ভাবে নাই অথবা ভেবেছে কিন্তু এই কথা সামনে আনলে পদ পদবি চলে যাবে, ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যেতে হবে, অতিরিক্ত কাজ দেশের জন্য করতে হবে তাই হয়ত তারা কখনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেই নাই অথবা কি করলে এটা সম্ভব তা হয়ত পারিবারিক প্রয়োজনে সময় কাটানোর জন্য এই কথা ভাবার সময়টুকুই পায় নাই।
২. যাই হোক ঝম ঝম বৃষ্টির মধ্যে একজনের কাছে শুনে জোরে দৌড় দিয়ে সম্ভবত ৭ বা ৮ নং বিল্ডিং এ এসে পড়লাম। দেখলাম মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর রুম। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী মিটিং এ, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর পিএস মিটিং এ। মাননীয় মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মাসুম বিল্লাহ স্যার অফিসে আছেন। আমি চিন্তা করলাম মাসুম বিল্লাহ স্যারের সাথেই দেখা করে আমার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন এর কথা বলব যাতে আমার এই ম্যাসেজ তিনি মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী মহোদয়কে বলেন আর মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন। আমি যেয়ে মাসুম বিল্লাহ স্যারের অফিস স্টাফ এর সাথে কথা বললাম। আমি পরিচয় দিলাম যে আমি গোল্ড মেডালিস্ট, নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক, ২২ তম বিসিএস কর্মকর্তা, সবাই নিজের প্রয়োজনে আসে কিন্তু আমি আমার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আসি নাই আমার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে আমেরিকার চেয়ে, ফিনল্যান্ডের চেয়ে উন্নত হয় তার জন্য এসেছি। আমার কথায় ঐ পিয়ন কনভিন্স হলো। আমাকে বলল আপনি ওয়েটিং রুমে বসেন।
৩. আমি ওয়েটিং রুমে বসে আছি। ওয়েটিং রুমে অনেক দামী দামী লোক, রাজকীয় পোষাক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় অফিসের বড় বড় কর্মকর্তা, কোন এক জেলার ছাত্রলীগের সভাপতি, তার সাথে আরো দুই তিনজন বসে আসেন। আমার পোষাক ছিল খুবই নরমাল। আপনারা ছবিতে দেখবেন। আমি কি সিরিয়াল পাব মন্ত্রী মহোদয় এর সহকারী একান্ত সচিবের সাথে দেখা করতে? অনেক টাইম চলে গেল। ঐ অফিস স্টাফ দুইবার আমার রুমে আসল, আমার কোন কল নেই। আমি তো জানিও না কিভাবে কখন আমাকে ডাকবেন। যাই হোক বসে থাকতে থাকতে অন্য কেউ হলে অধৈর্য্য হয়ে চলে যেত। কিন্তু আমি তো দেশের স্বার্থে এসেছি। আমাকে তো কস্ট করতেই হবে। বিড়ালের গলায় ঘন্টা তো আমাকেই বাধতে হবে। যাই হোক অনেক পরে ডাক পেলাম। মাসুম বিল্লাহ স্যারকে আমার সকল পরিচয় খুলে বললাম। স্যার কনভিন্স হলেন। আমাকে একটা কার্ড দিলেন। আজ মন্ত্রী মহোদয় নেই। সম্ভবত আমেরিকা বা অন্য কোন দেশে খুব তাড়াতাড়ি যাবেন। আগামী মাসের ১ তারিখের পর মন্ত্রণালয়ে আসবেন তারপরে কোন একদিন আমার সাথে মন্ত্রী মহোদয় এর দেখা করার সুযোগ করে দিবেন। আমি খুব খুশি। মন্ত্রী মহোদয় এর সাথে দেখা করার মুহুর্তে যদি সুযোগ হয় তাহলে পে স্কেলের কথা বলে আসব। চাউল ডাউলের দাম, তেলের দাম যেভাবে বাড়তেছে আমাদের সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য, যারা পেনশন এ আছেন তাদের জন্য নতুন পেস্কেল না দিলে আমার মতো অসহায় মানুষ যাদের আত্মীয় স্বজন হাসপাতালের ব্যয় বহন করতে করতে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত তারা কস্ট করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।
বিদ্যুৎ কুমার রায়
সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন
২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা, নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক।