৬ বছরের শিশু আলিফ। প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। করোনা মহামারীতে স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতেই থাকতো। বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পৌর সদরের আনন্দনগর মহল্লায়। আলিফের বাবা স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী ছিলো। করোনার সময় সরকার ঘোষিত লকডাউন দেওয়া হলে সাময়িক ভাবে তার বাবা সাইফুল ইসলামের চাকরী চলে যায়। শুরু হয় সংসারে অভাব অনটন। অভাবের তারনায় শুরু করেন বাদাম বিক্রি। আর সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্যই বাবার পাশাপাশি বাদাম বিক্রি শুরু করে শিশু আলিফ।
উপজেলা পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের বিভিন্ন জায়গায় আলিফ বাদাম বিক্রি করে। গত (২২ আগস্ট) বাদাম বিক্রির সময় আলিফের সাথে দেখা হয় চাঁচকৈড় হাজেরা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো-আমিরুল ইসলাম সাগরের সাথে। দেখা হওয়ার পর বাদাম বিক্রেতা শিশুকে ক্লিনিকে নিয়ে আসেন আমিরুল ইসলাম সাগর। এবং তার কাছে তার পারিবারিক ও শিশু আলিফের বাদাম বিক্রির জীবনের গল্প শোনেন। গল্পের শেষে আলিফকে জিজ্ঞেস করেন তার ইচ্ছা কি। আলিফ তার ইচ্ছা জানায়। একটি বাই সাইকেল হলে আলিফ স্কুল খুললে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে পারবে। এবং তার পড়াশোনার খরচ যোগার করা সম্ভব হয়না তার পরিবারের পক্ষ থেকে। তাই সাইকেলের পাশাপাশি তার পড়াশোনার খরচ চায় আলিফ। তাহলে সে বাদাম বিক্রি বাদ দিয়ে পড়াশোনা আবার শুরু করবে। আলিফকে সঙ্গে নিয়ে বাজারের একটি দোকানে গিয়ে তার প্রথম ইচ্ছে একটি সাইকেল ক্রয় করে দেন আমিরুল ইসলাম সাগর। পরে নতুন সাইকেল নিয়ে আলিফের বাবার হাতে আলিফকে তুলে দিয়ে তার পড়াশোনার সকল খরচ তিনি দিবেন বলেও জানিয়ে আসেন। আলিফ ও তার বাবা প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন স্কুল খুললে আর বাদাম বিক্রি করবে না আলিফ।
শিশু আলিফ তার ইচ্ছে পুরনের অনুভুতি সম্পর্কে জানায়, সাইকেল পেয়ে তার অনেক ভাল লাগছে। স্কুল খুললে সে আর বাদাম বিক্রি করবে না। নিয়মিত স্কুলে যাবে।
চাঁচকৈড় হাজেরা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো-আমিরুল ইসলাম সাগর জানান, স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। কিন্তু সেই স্বপ্নটা সবসময় পূরণ হয়না। এই স্বপ্নগুলো পূরণ না হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ লুকিয়ে থাকে। যে কারণগুলো সত্যিই আমাদের কাছে খুবই কষ্টদায়ক। আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো কখনো পূরণ হবে না জেনেও আমরা স্বপ্ন দেখি। শিশু আলিফের বিষয়টি আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। ৬ বছরের শিশু সে কিভাবে বাদাম বিক্রি করে বাজার-ঘাটে। এই অল্প বয়সেও যে তার পরিবারের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা তা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী আলিফের ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। এবং আলিফ যেন নিয়মতি পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য তার পড়াশোনার সকল দায়িত্ব নিয়েছি আমি।
এদেশে এমন অনেক গরীব পরিবার আছে। যাদের দিন গুলো খুবই কষ্টে এবং দুঃখের সাথে কাটে। তারপরেও এই দুঃখ কষ্টের মাঝেও তারা স্বপ্ন দেখে। তারা স্বপ্ন দেখে একটু ভালো ভাবে জীবন যাপন করার।তারা স্বপ্ন দেখে বর্তমানের চেয়ে একটু ভালো ভাবে যাতে বাঁচতে পারে। তাঁরা স্বপ্ন দেখে তাদের পরিবার যেন সবসময় সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন।
আবার এই গরীব পরিবারের এমন কিছু অপ্রকাশ্য স্বপ্ন আছে যেগুলো কখনোই পূরণ হয়না। এমনকি তারা এটা পূরণ হওয়ার কথা চিন্তাও করে না কখনো। তারপরেও তারা স্বপ্ন দেখে। আসলে মানুষের জীবন কখন কোন দিকে যাবে সেটা কেউই বলতে পারে না। তাই সবাই স্বপ্ন দেখতে থাকে, এই আশায় যে যদি কখনো স্বপ্নগুলো পূরণ হয়।
যাইহোক গরিবের অনেক স্বপ্ন আছে যেগুলো কখনো পূরণ হবার নয় কিন্তু এদেশের যে সকল ধনী ব্যক্তিরা আছেন এবং যাদের সামর্থ্য আছে তারা যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো এই গরীব পরিবারের অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। আর আমার মনে হয় এই গরীব পরিবারের স্বপ্ন গুলো খুব একটা বড় হয় না। শুধুমাত্র একটু সাহায্যের অভাবে এদের স্বপ্নগুলো অপূর্ণ রয়ে যায়।