নাটোর প্রতিনিধিঃ
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার উদ্যোগে দীর্ঘ ১০ বছর পর আদিবাসি নারী কল্পনা পাহান তার বসতভিটা ফিরে পেয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার শহরতলীর ‘হাজরা নাটোর’ এলাকার যান। এসময় তিনি কল্পনা পাহানের সাথে কথা বলে তাকে তার বসতভিটায় তুলে দেন। সেই সাথে সুদ ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হুসিয়ারি উচ্চারণ করেন। ভবিষৎতে কেউ যদি সুদের ব্যবসা করে তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানান তিনি। বাড়ি ফিরে পেয়ে কল্পনা পাহান পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় পুলিশের অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ‘হাজরা নাটোর’ এলাকার কল্পনা পাহানের কিডনির সমস্যা হলে তিনি সুদ কারবারি খুশি বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর কয়েক ধাপে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু সুদ বাবদ খুশি বেগম তিন লাখ টাকা দাবী করেন। এরই এক পর্যায়ে একদিন দলবল নিয়ে বাড়িতে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটা ফাঁকা স্ট্যাম্পে তার স্বামী গোহনু পাহানের স্বাক্ষর নেয় তারা। এর সপ্তাহ খানেক পরে তাদের দুই শতাংশ জমির উপর নির্মিত কাচা বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেন সুদ ব্যবসায়ী খুশি বেগম। এখন সেখানে পাকা দালান তুলে বসবাস কারতে থাকেন খুশি। দলিল থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে জায়গার দখল ছিল না কল্পনার। অন্যের জমিতে কাজ করে কোনওভাবে বেঁচে আছেন তিনি। এ বিষয়ে কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেরার হুমকিও দেন খুশি বেগম। এছাড়া একই এলাকার সামছুন্নার, রহিমা বেগমও সুদ কারবারি খুশি বেগমের খপ্পরে পড়ে বসতভিটা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন। এনিয়ে যমুনা টেলিভিশন, প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে তা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নজরে আসে। তখন থেকেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। কয়েকদিনের অনুসন্ধানে সুদের ভয়াবহতার সত্যতা পাওয়ায় সুদ ব্যবসায়ী খুশি বেগমকে থানায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ খুশি বেগম ও ভূক্তভোগীদের থানায় নিয়ে আসেন। সেখানে ভূক্তভোগী সামসুন্নাহার বাদি হয়ে খুশি বেগমের বিরুদ্ধে চঁাদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। মামলার এজাহারে ভূক্তভোগী কল্পনা পাহানের বসতভিটা দখল করে নেওয়া ও কথিত সুদের টাকার জন্য রহিমা বেগমকে নির্যাতনের ঘটনা উঠে আছে। পরে খুশি বেগমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কল্পনা পাহানের বসতভিটা ফিরে পাওয়ায় এলাকাবাসি পুলিশ সুপার লিটন কুমারসাহা সহ গমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।