চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এ সড়কটিতে লেগে আছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলীর রক্ত। অথচ এই সড়কটির নামকরণ করা হয় রাজাকার আবদুল গণি চৌধুরীর নামে ছবি: সৌরভ দাশ
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী
কিছু পথ ইট বিছানো, কিছুটা কালো পিচে ঢালাই করা প্রায় দুই কিলোমিটারের একটি সড়ক। গাছের ছায়ায় ঢাকা দীর্ঘ পথ। পথের যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু এক করুণ গল্পের। গল্প নয় আসলে, কিছু কিছু সত্য ঘটনা কল্পনাকেও হার মানায়, তখন লোকমুখে তা গল্প হয়ে ওঠে। রুস্তম আলীর গল্পটাও সে রকম।
আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল (চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এলাকা থেকে পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে বাঁ দিকে ঢুকে গেছে রাস্তাটি। ১০ বছর আগে একবার এখানে এসেছিলাম একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা নিজের চোখে দেখব বলে। দেখেছিলাম। গভীর দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে রেখে ফিরেছিলাম সেদিন। ১২ ডিসেম্বর (শনিবার) গেলাম আরও একবার। আবারও একই কষ্ট, একই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিরে। ইতিহাসের সেই যে বিকৃতি ঘটেছিল ১০ বছর আগে, তার আর সংশোধন হয়নি। কলঙ্কিত ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই থাকল সড়কটি।
গল্পটি একটু পেছন থেকেই বলি। প্রায় ৫০ বছর আগের ঘটনা, কোথাও যাতে তথ্যবিভ্রাট না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে আরও একবার ঝালিয়ে নিলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আনোয়ারা উপজেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি এস এম নুরুল আমিনের (৬৯) সঙ্গে। তিনি বলেছেন ঘটনার আদ্যোপান্ত। অবশ্য এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ের গবেষক ও লেখক জামাল উদ্দিনের আনোয়ারা: একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থেও এ ঘটনার উল্লেখ পেয়েছি।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন রুস্তম আলী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সম্ভবত তিনি এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। রাজাকাররা রুস্তমের লাশ তুলে গলায় দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে।
দুর্যোগের রাতে অভিযান
১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ছিল ঘূর্ণিঝড়ের এক রাত। বেতারে বারবার বিপৎসংকেতের ঘোষণা হচ্ছিল। প্রথমে ৬ ও পরে তা উন্নীত হয় ৯ নম্বর বিপৎসংকেতে। এদিকে সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ওই দিনই পশ্চিম আনোয়ারার পাঁচটি রাজাকার ক্যাম্পে একসঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। এই এলাকায় অভিযান পরিচালনার কারণ হচ্ছে আনোয়ারার মেরিন একাডেমিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড় ক্যাম্প ছিল বলে এলাকাটিতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল গণি চৌধুরী ও রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরীর নেতৃত্বে রাজাকার-আলবদররা এখানে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ হেন কোনো দুষ্কর্ম নেই, যা করেনি। সাত-আটটি দলে বিভক্ত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে দুর্যোগপূর্ণ সেই রাতে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন সার্জেন্ট মহিউল আলম। পরিকল্পনামাফিক রাত ১১টায় প্রচণ্ড ঝড়-জলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়েছিলেন শত্রুব্যূহে, ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রাজাকারদের ওপর। সেই রাতে পাঁচটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৫ জন রাজাকারকে হত্যা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আবদুল গণি চৌধুরী ও জালাল চৌধুরীকে ঘায়েল করা যায়নি। তারা ট্রলারে চেপে শঙ্খ নদের মোহনার দিকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে সমর্থ হয়।
মোটামুটি সফল একটি অভিযান শেষে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে ঘটে যায় এক অভাবিত দুর্ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বারশত ইউনিয়নের সুরমা পুকুরপাড়ে একটি চা–দোকানে অপেক্ষা করছিল অন্য সহযোদ্ধাদের জন্য। দোকানের বাইরে অদূরে অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছিলেন ২০-২১ বছরের তরুণ রুস্তম আলী। এ সময় নানা দিক থেকে পালিয়ে যেতে থাকা রাজাকারদের একটি দলকে দেখতে পান তিনি। কিন্তু অন্ধকারে ভুলবশত সহযোদ্ধাদের দল মনে করে টর্চের আলো জ্বেলে তাদের সংকেত দিতেই রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বুঝে ফেলে এবং রুস্তমকে গুলি করে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দোকান থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসে দেখতে পান সহযোদ্ধার লাশ। রাত তখন প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এদিকে সার্জেন্ট মহিউল আলমও এসে পৌঁছেছেন। লাশ নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সেখানে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তে শহীদ রুস্তমের লাশ দাফন করা হয় সুরমা নদীর পারে। সামরিক কায়দায় তাঁকে বিদায় অভিবাদন জানান সহযোদ্ধারা। জয়ের আনন্দের মধ্যেও সঙ্গীকে হারানোর বিষণ্নতা নিয়ে ফিরে যান সহযোদ্ধারা।
বিস্ময় শব্দটির প্রকৃত অর্থ বুঝে নিতে বোধ হয় তখনো বাকি ছিল আমাদের। কিন্তু সেটা পূর্ণ হলো যখন দেখতে পেলাম ‘আবদুল গণি সড়কে’র ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের তত্কালীন সাংসদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। কী নির্মম কাকতাল, সেদিন ছিল ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস!
পৈশাচিক! বর্বর!
পরদিন ঘটে এক পৈশাচিক ঘটনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিন বলেন, এ ঘটনা যারা দেখেছিলেন, তাঁরা অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা এখনো শিউরে ওঠেন সেই বীভত্সতার কথা স্মরণ করে। অনেকেই সন্তান ও নাতি-নাতনিদের বলে গিয়েছিলেন ১০ নভেম্বর ১৯৭১ সালের সেই ঘটনা। এলাকায় এখনো মুখে মুখে প্রচলিত আছে সেই ঘটনা।
পরদিন সকালে খবর পেয়ে রাজাকার কমান্ডার জালাল ও গণির নেতৃত্বে রাজাকাররা ছুটে আসে সুরমা পুকুরপাড়ে। তারা কবর খুঁড়ে বের করে আনে রুস্তমের লাশ। সেই লাশের গলায় দড়ি বেঁধে পৈশাচিক উল্লাস করতে করতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় মেরিন একাডেমির পাকসেনাদের ক্যাম্পে। বারশত কালীবাড়ি এলাকা থেকে মেরিন একাডেমি পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কটিতে রুস্তমের মৃতদেহ রক্ত-কাদায় একাকার হয়ে গিয়েছিল, খসে পড়েছিল শরীরের মাংস। শোনা যায়, খোদ পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর এ বীভত্স দৃশ্য দেখে ভর্ৎসনা করেছিল রাজাকারদের। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে একটি মৃতদেহের ওপর এ নির্মমতা প্রদর্শনের জন্য ধিক্কার দিয়ে লাশটি আবার একই স্থানে কবর দেওয়ার জন্য গণি চৌধুরীদের নির্দেশ দিয়েছিল মেজর। অতঃপর সুরমা পুকুরপাড়েই সাড়ে তিন হাত কবরের মাটি পেয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী। ২০১১–১২ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পুকুরপাড়ে রুস্তমের কবরটি পাকা করে দেয় এবং নির্মাণ করে একটি স্মৃতিসৌধ।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন রুস্তম আলী। তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে এই প্রতিবেদক খুঁজে পাননি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সম্ভবত তিনি এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। আনোয়ারা: একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থের লেখক জামাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রুস্তমের মা আমাকে বলেছিলেন রুস্তম এসএসসি পাস করে সিটি কলেজে এইচএসসি পড়তেন। তাঁর কাছে কোনো কাগজপত্র আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি এসএসসি ক্লাসের কিছু পাঠ্যবই দেখিয়েছিলেন আমাকে।’
রুস্তমের নামে হোক সড়ক
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ রুস্তম আলীর নামে সড়কের নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যে সড়কটিতে লেগে আছে তাঁর রক্তের দাগ, তাঁর মৃতদেহের অবমাননার চিহ্ন, সেই সড়কটিকে শহীদ রুস্তম আলী সড়ক নামকরণ করার প্রস্তাব তাঁরা পৌঁছে দিয়েছিলেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে। সরকারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে নিজেরাই সাইনবোর্ডে টাঙিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ রুস্তমের নাম। কথা অনেক দূর এগিয়েছিল বলে আমাকে জানিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রশিদ আহমদ। কিন্তু এর মধ্যে পঁচাত্তরে সপরিবার বঙ্গবন্ধুর হত্যা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ব্যাপারটি আর এগোয়নি। উপরন্তু সড়কের নামসংবলিত সাইনবোর্ডটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নিজেদের ‘পুনরুত্থানের’ কথাটিই যেন ঘোষণা করেছিল। বছর দশেক আগে রশিদ আহমদ (সদ্য প্রয়াত) এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘তাদের কাছে আশা করি নাই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দেবে না, সেটা তো আমরা জানতাম। আমরা আশা করেছিলাম আবার কখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আমাদের এই চাওয়া পূরণ হবে। কিন্তু কী চেয়েছিলাম, আর কী হলো!’ রশিদ আহমদের সেই হাহাকারের প্রতিধ্বনি যেন আজও শুনতে পাই আমরা।
বিকৃত ইতিহাস, কলঙ্কিত ইতিহাস!
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আনোয়ারা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা আবার শহীদ রুস্তমের নামে সড়কের দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। অতঃপর সড়কটি উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। ২০১০ সালে এলজিইডি এক্সকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের দপ্তর, চট্টগ্রামের বরাতে একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। কিন্তু সড়কের নাম দেখে বাকরুদ্ধ এলাকাবাসী, ক্ষোভে-বেদনায় পাথর মুক্তিযোদ্ধারা! সড়কের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আবদুল গণি চৌধুরী বারশত গোবাদিয়া লিংক রোড।’
প্রিয় পাঠক, চিনতে পারছেন তো এই গণি চৌধুরীকে? শহীদ রুস্তমের লাশ কবর থেকে তুলে রাজাকাররা টেনেহিঁচড়ে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময় যে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই গণি চৌধুরী। এত রক্ত, এত মৃত্যু, এত ত্যাগের পর অর্জিত এক স্বাধীন দেশে এত কম সময়ের ব্যবধানে ইতিহাস এমন উল্টো পথে হাঁটতে পারে, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও এর উদাহরণ পাওয়া যাবে কি না জানি না।
তাদের কাছে আশা করি নাই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দেবে না, সেটা তো আমরা জানতাম। আমরা আশা করেছিলাম আবার কখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আমাদের এই চাওয়া পূরণ হবে। কিন্তু কী চেয়েছিলাম, আর কী হলো!
উদ্বোধন করলেন মুক্তিযোদ্ধা! ১৬ ডিসেম্বর!
বিস্ময় শব্দটির প্রকৃত অর্থ বুঝে নিতে বোধ হয় তখনো বাকি ছিল আমাদের। কিন্তু সেটা পূর্ণ হলো যখন দেখতে পেলাম ‘আবদুল গণি সড়কে’র ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের তত্কালীন সাংসদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। কী নির্মম কাকতাল, সেদিন ছিল ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস!
ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, প্রতিবাদ সভা, প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। দুঃখ-হতাশায় মুহ্যমান বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদ আহমদ বলেছিলেন, ‘বাবু ভাইকে (প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী) অনেক অনুনয় করেছি। আপনি মুক্তিযোদ্ধা, পায়ে পড়ি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এভাবে বিকৃত করবেন না। কিন্তু তিনি শুনলেন না।’
কেন সেদিন একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাতর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন জানি না। কেনই–বা একজন রাজাকারের নামে সড়কের নামফলকটি ইতিহাস-বিকৃতির প্রতীক হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে জানি না।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক আখতারুজ্জামান চৌধুরী আজ নেই। নেই জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রশিদ আহমদসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাই। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর গিয়ে সেই রক্তাক্ত, শহীদ রুস্তমের স্মৃতিবিজড়িত সড়কটিতে গিয়ে দেখলাম আবদুল গণি চৌধুরীর নামে সড়কস্তম্ভটি রয়ে গেছে সগৌরবে!
যশোরের সাগরদাঁড়িতে কবি মাইকেল মধুসূদনের সমাধিফলকে লেখা আছে ‘দাঁড়াও পথিকবর, তিষ্ঠ ক্ষণকাল…।’ সেখানে পথিক দাঁড়িয়ে কবিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আনোয়ারা উপজেলার ছায়াঢাকা পথটি ধরে হেঁটে যেতে যেতে সড়কস্তম্ভটির সামনে দাঁড়াতে হলো। গণি চৌধুরীর নামটি দেখে লজ্জায়–গ্লানিতে মুখ ঢাকতে ইচ্ছা করছিল। বারবার মনে পড়ছিল ২০-২১ বছরের একটি তরুণের কথা, যাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশের অবমাননার সাক্ষী এই পথ। আগামী প্রজন্ম হয়তো প্রকৃত ইতিহাস জানবে না। গণি চৌধুরীরাই হয়ে উঠবে তাঁদের চোখে বড় মাপের মানুষ!
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর রাতে আনোয়ারায় সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। নুরুল আমিন বলেন, ‘সেই রাতে রুস্তমকে হারিয়েছিলাম আমরা। রাজাকার গণি চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশের অমর্যাদা করেছিল। তার নামে সড়ক হওয়ায় শহীদের আত্মা কষ্ট পেয়েছে। আমরা অভিশপ্ত হয়েছি। আমরা চাই অবিলম্বে এই সড়ক থেকে গণি চৌধুরীর নামফলক অপসারণ করে ইতিহাসকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
সুত্র: প্রথম আলো ১৪/১২/২০২০