ঝিনাইদহের শৈলকুপায় উলফাত আরা তিন্নী (২৪) নামের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর নিজ ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার মেঝ বোনের সাবেক স্বামী জামিরুল ইসলাম লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে ভাঙচুর চালায়। তিন্নীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, জামিরুলের লোকজন তিন্নীকে নির্যাতনের পর তাকে তার ঘরের মধ্যে মেরে পালিয়ে গেছে। এরপর ঘটনাটিকে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তিন্নী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
তিন্নীর মা হালিমা বেগম গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘আমার মেয়ে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার দিন সে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া থেকে এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার পথে জামিরুল ইসলাম তাকে হুমকি দেয়। সে তাকে ক্ষতি করবে বলে জানায়।’ তিনি দাবি করেন, তিন্নীকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নীর বড় বোন মিন্নির একই গ্রামের নুরুদ্দীনের ছেলে শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসারে অশান্তি থাকায় প্রায় এক বছর হলো তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই জামিরুল তার স্ত্রীকে আবার ঘরে নিতে চায়। কিন্তু মিন্নি এতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে জামিরুল ইসলাম ঐ পরিবারের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার বিষয়ে চাচা হেলাল উদ্দিনের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল ইসলাম বেশ কয়েকজন নিয়ে তিন্নীদের বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা ফিরে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আবারও জামিরুলরা ঐ বাড়িতে আসেন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় থাকা তিন্নীর ঘরে প্রবেশ করে। পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তারা তিন্নীকে একা পেয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায়। তারা তিন্নীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে যায়। কিন্তু তার পা খাটের সঙ্গে লাগানো ছিল। হেলাল উদ্দিনের দাবি, এভাবে ঝুললে কেউ মারা যাবে না। তাকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তিন্নীর খালাতো ভাই ও প্রতিবেশি মখলেসুর রহমান জানান, তারা বাড়িতে গিয়ে দেখেন, তিন্নী খাটের ওপর বসা অবস্থায় রয়েছে। তার ওড়নার এক মাথা ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা। অপর মাথা তিন্নীর গলার সঙ্গে বাঁধা ছিল। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃত বলে জানান।
বড় বোন মিন্নি বলেন, জামিরুল ইসলাম ও তার লোকজন দোতলায় উঠে তিন্নীর সঙ্গে খারাপ কিছু করেছে। তারা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা অবস্থায় তিন্নীকে পেয়ে দ্রুত কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
শৈলকুপা থানার পুলিশ পরিদর্শক মুহসিন আলি জানান, হামলার এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজন চ্যাঁচামেচি শুনে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তিন্নীর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।
ঝিনাইদহ পুলিশের একটি দল ছাত্রীর বাড়ি পরিদর্শন করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রীর বাড়ির দরজায় কোপানোর চিহ্ন, জানালার গ্লাস ভাঙা দেখতে পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
ঘটনার পর থেকেই জামিরুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক ৩ অক্টোবর