ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ সাতজনকে সোমবার সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পর নুরুল হককে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এর আগে সন্ধ্যায় পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, নুরুলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি থানায় ধর্ষণ মামলার প্রতিবাদে নূর ও তাঁর সহযোগীরা শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। পরে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে নুরুল হকসহ সাতজনকে পুলিশ আটক করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল হককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু বলেন, রাত পৌনে দশটার দিকে নুরুল হকসহ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তাঁরা আহত হন।
রোববার রাতে ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার ১ নম্বর আসামি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
মামলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং পরে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ার অভিযোগ আনেন। নুরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মীমাংসা করার নামে তাঁকে (ছাত্রীকে) নীলক্ষেতে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন। তিনি (নুরুল) বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের ভক্তদের দিয়ে তাঁর নামে ‘উল্টাপাল্টা’ পোস্ট করাবেন এবং ‘যৌনকর্মী’ বলে প্রচার করাবেন। তাঁদের গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এতে তাঁর সম্মানহানি হবে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা ও শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষার্থী একদিন মুঠোফোনে তাঁকে অভিযোগ করেছিলেন নাজমুল হাসান সোহাগ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নাজমুল তাঁদের সংগঠনের পদধারী কেউ নন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর তাঁদের সঙ্গে চলাফেরা করত। তিনি তখন ওই শিক্ষার্থীকে বলেছিলেন, সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি দেখবেন। নুরুল আরও বলেন, হাসান আল মামুনের বিষয়ে মেয়েটির যে অভিযোগ, সে ব্যাপারে মামুনই জবাব দিতে পারবেন। নূরের দাবি, সরকারের সমালোচনা করায় প্রথম থেকেই তাঁর ওপর হামলা হচ্ছে। এই মামলাও তারই ধারাবাহিকতা। তাঁর দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার এলাকা হওয়ায় তাঁর মদদেই ওই শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
নুরুল হকের উত্থান সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। ওই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে। সম্প্রতি তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও ঘোষণা দেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়, ডাকসু নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর ডাকসু ভবনেও হামলার শিকার হন নুরুল হক।
সুত্র: প্রথম আলো