পেয়ারা চাষেই সফল নাটোরের উদ্যোক্তা আফাজ
স্টাফ রিপোর্টার: পেয়ারা চাষে ঈর্ষনীয় সফলতা পেয়েছেন নাটোরের উদ্যোক্তা আফাজ আলী। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই বিঘার পরীক্ষামূলক পেয়ারা চাষের বাগান এখন দুইশ’ বিঘা ছাড়িয়েছে। একই প্লটে একশ’ ১০ বিঘার বিশাল বাগান তৈরী করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি। বারবার ব্যবসায়ের পরিবর্তন শেষে পেয়ারা চাষে থিত হয়েছেন তিনি। পেয়ারাই এখন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, সবকিছু। ভিটামিন-খনিজ উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদনে ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে একশ’ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন আফাজ।
নাটোরের অসংখ্য ফল উৎপাদক সারাদেশে নন্দিত হয়েছেন ইতোপূর্বে। তাদের উৎপাদনের ক্ষেত্র কখনো একটা মাত্র ফলে সীমিত থাকেনি। প্রত্যেকেই রকমারি ফল উৎপাদন করেন। ব্যতিক্রম শুধু আফাজ আলী। তাঁর ক্ষেত্র শুধুই পেয়ারা।
নাটোর সদর উপজেলার শংকরভাগ এলাকায় একশ’ দশ বিঘার পেয়ারা বাগান তৈরী করেছেন আফাজ আলী। বাগানের বিশালতা আর আফাজের কর্মযজ্ঞ দেখতে বাগানে হাজির হন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার, নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীরা।
নাটোর সদর উপজেলার রুয়েরভাগ এলাকায় কৃষক পরিবারে দশ ভাইবোনের আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে সবার ছোট আফাজ। আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে ব্যবসায়ের হাতছানীর কারনে পড়াশোনাকে এগিয়ে নিতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। গ্রাজুয়েট হতে না পারার অতৃপ্তি এখনো তাড়া করে ফেরে তাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা শেষে চাউল ব্যবসায় শুরু করেন তিনি। এই ব্যবসায়ে মুনাফা থাকলেও একসময় তাঁর কাছে মনেহয়, বৈচিত্র্যহীন। সৃজনশীলতার সন্ধানে ২০১৫ সালে বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে শুরু করেন পেয়ারা চাষ। দুই বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বছর শেষে পেয়ারা বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকার। ব্যবসায়ের সঠিক ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন মনে করে, বৃদ্ধি করতে শুরু করেন পেয়ারা বাগানের পরিধি। নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া, ছাতনী, বড়হরিশপুর ইউনিয়ন পেরিয়ে আফাজের পেয়ারা বাগান সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহতে। দুই শতাধিক বিঘার মোট নয়টি বাগান জুড়ে পেয়ারা চাষ করে আফাজ এখন জেলার সবচে’ বড় পেয়ারা উৎপাদক।
আফাজ থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ করেন। এক বিঘাতে গাছ থাকে দুইশ’টি। সাধারণত এক বছরের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। প্রতি গাছের বাৎসরিক ফলন এক মণের কাছাকাছি । বারো মাস ফলন পাওয়া গেলেও পেয়ারের মৌসুম মূলত আশ্বিন থেকে জৈষ্ঠ্য মাস। তবে উচ্চ মূল্য সময় হিসেবে পৌষ ও মাঘ মাসসহ অগ্রহায়ন ও ফাল্গুনের অর্ধেকটা সময় ব্যবসায়ীদের কাছে পেয়ারা বাজারজাতকরণের কাংখিত সময়। আফাজের বাগানের পেয়ারা নাটোর ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে।
আফাজ বলেন, অন্য কোন ফল নয়, পেয়ারা আমার ধ্যান-জ্ঞান, সবকিছু। নয়টা বাগানে প্রতিদিন গড়ে একশ’ মানুষ কাজ করে। কর্মরতদের গাছ রোপন, আগাছা নিধন, সার দেওয়া, সেচ, পেয়ারার ব্যাগিং কাজের দিক নির্দেশনা দিয়ে আমার দিন কাটে। পেয়ারা চাষ করছি আর ক্রমশ অনেক অজানাকে জানছি। আমার মত করে আমি প্রযুক্তি আবিষ্কার করছি। উৎপাদনের মান বাড়াতে আমার অদম্য চেষ্টা। নাটোরকে পেয়ারার জেলা হিসেবে পরিচিত করাতে চাই।
আগামী মৌসুমে দুই শতাধিক বিঘার পেয়ারা বাগানে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে জানিয়ে আফাজ বলেন, আশা করছি মুনাফা হবে অন্তত চার কোটি টাকা। পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রকমারি পেয়ারার খাবার তৈরীর পরিকল্পনা আমার মাথার মধ্যে আছে বলে ভবিবষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে জানান আফাজ।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ পেয়ারা উৎপাদনের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সব সময় আফাজের পাশে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, পেয়ারার বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে আফাজ শুধু নিজের আর্থিক সমৃদ্ধিই অর্জন করেননি, শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, সর্বোপরি দেশের মানুষের পুষ্টির অভাব পূরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তিনি অবদান রাখছেন।
আফাজের পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করে একটি নতুন পেয়ারার চারা রোপন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নিরাপদ পেয়ারা উৎপাদন ছাড়াও আফাজ অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। আফাজ আমাদের জন্যে অনূকরণীয়। আশাকরি, শিক্ষিত তরুণরা চাকুরীমুখী না হয়ে আফাজের মত উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন এবং তাদের কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে নাটোরকে নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করবেন।