সৈয়দ মাসুম রেজা, নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোর জেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। নলডাঙ্গা ও সিংড়ার ২টি বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তির্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। সিংড়ায় আত্রাই, গুরনই, নাগর নদী এবং নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদীর পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে হালতি বিল ও চলনবিলের বিস্তির্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আত্রাই ও বারনইসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ-পিএএ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রতি যার যার দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে পানির তীব্র স্রোতে পৌর এলাকাধীন শোলাকুড়া মহল্লার সিংড়া-বলিয়াবাড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মহেশচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি মহল্লার হাজার হাজার মানুষ। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে নাগর নদীর হিয়াতপুর নামক স্থানে সিংড়া-তাজপুর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এর ফলে তাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সাথে সিংড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
নিয়ন্ত্রনহীন প্রবল বন্যায় সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার ৩ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৪২ হেক্টর জমির সবজি এবং ২ হেক্টর জমির মাসকালাই পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় ৫হাজার পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত দেড় লাখ মানুষ। ফলে নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গত মানুষ। ইতোমধ্যে নলডাঙ্গার ৩০টি এবং সিংড়ায় ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিংড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শোলাকুড়া মহল্লা সংলগ্ন বাঁধ ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে আরও অনেকগুলো বাড়ি। পৌর মেয়র আরও বলেন, আমরা মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি’র নির্দেশনায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি।
সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ জানান, বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য দুটি উপজেলায় মোট ৫০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় দুই সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার জানান, নতুন করে বন্যার কারণে এই দুই উপজেলায় মোট ৩ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৪২ হেক্টর জমির সবজি এবং ২ হেক্টর জমির মাসকালাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, দ্বিতীয় দফার এই বন্যায় জেলার নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলার প্লাবিত অঞ্চলে এ পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বন্যার পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আরও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ লক্ষ গবাদি পশু। এ দুটি উপজেলার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এবং বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে পশু খাদ্যের মধ্যে অন্যতম খাদ্য খড়। যার পরিমাণ প্রায় ৬০ মে.টন। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেশনের কাজ শুরু করা যাবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সদা প্রস্তুত রয়েছে। সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।