নাটোরের সিংড়ায় আত্রাই নদী ও চলনবিলে আগাম অবৈধ সৌঁতিজাল ও বাঁনাজাল স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। বন্যার পানি আসতে এখনো বাঁকি দুইমাস। বর্তমানে নদী ও বিল শুকনো থাকার সুযোগে প্রভাবশালীরা এসব অবৈধ সৌঁতি ও বাঁনা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অবৈধ সৌঁতিজালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন। তারপরেই নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম সামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে কলম ইউনিয়নের নুরপুর, কালিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাঁনা ও সৌঁতির স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার কলম, চামারী, তাজপুর ও ছাতারদীঘি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় অর্ধশত অবৈধ সৌঁতি ও বাঁনা স্থাপন করতে দেখা গেছে।
গত ২০১৭ ও ২০২০ সালের বন্যায় অবৈধ সৌঁতি ও বাঁনার বাঁধ দেয়ার কারণে স্বাভাবিক পানি চলাচলে বিঘœ ঘটে বড় বন্যা হয়। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সিংড়া উপজেলাবাসী।
গত বছরে বন্যায় সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে ১৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো ২৫টি বাড়িঘর।
শোলাকুড়া, সোহাগবাড়ি, কতুয়াবাড়ি, মহেশচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একইভাবে তাজুপর ইউনিয়নের হিয়াতপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করেছেন। উপজেলায় বন্যায় মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের বন্যায় বাড়ি-ঘর এমনকি ফসল জমি হারিয়ে নি:স্ব চলনবিলের বানভাসিরা ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ হাজারের বেশি মানুষকে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছিল। ফসল, মৎস্য, কৃষি ও সড়কে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
গত বছর বন্যায় অবৈধ সৌঁতি উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।
প্রতিমন্ত্রী পলকের কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে এ বছর আবার আগাম সৌঁতি স্থাপন করার প্রস্তুতি প্রভাবশালীদের খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মাঝে।
পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, অবৈধ সৌঁতিজালের প্রভাবে বন্যার সময় বারবার সিংড়া উপজেলাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেনি ভূক্তভোগীরা। হাতেগণা কয়েকজন ব্যক্তির কাছে পুরো উপজেলার মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতে পারেনা। সৌঁতিজাল স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম সামিরুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েকটি অবৈধ সৌঁতি ও বাঁনার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।