সাধারণ মানুষের অসাধারণ অনুভুতি-
————— বিদ্যুৎ কুমার রায়
১. আমি একজন সাধারণ মানুষ, একজন সাধারণ শিক্ষক। প্রশাসন ক্যাডারে কখন চাকরি করি নাই। কিন্তু যখন পিএটিসির রেক্টর আমার বক্তব্যের পরে আমাকে বলে আপনি তো ভীষণ চমৎকার বক্তব্য দেন। আমি ভীষন ইন্সপায়ার হলাম। তখন কিভাবে যে আমি তাহার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারি না। আমি ঋণি হয়ে যাই। আবার যখন আমার বক্তব্যের পরে একজন সিনিয়র সচিব আমাকে বলেন বিদ্যুৎ স্যার আমি যদি আপনার ছাত্র হতে পারতাম তাহলে অনেক উপকার হইত। আমি তার প্রতিও ঋণি হয়ে যাই। অপরপক্ষে যখন আমার কোন সহকর্মী আমাকে বলেন এটা কখনও সম্ভব না, ওটা সম্ভব না। তখন আমি তার চিন্তা দেখে ভীষণ কষ্ট পাই। আসলে আপনি ক্লাসে ফাস্ট হতে পারেন নাই বলে অন্য কেউই যে ফাস্ট হতে পারবে না এই কথা আপনি কিভাবে বলেন? আপনি নিজে ফাস্ট হতে না পারলে যে ফাস্ট হতে চায় তাকে আপনি কেন বাধা দিবেন? এটা তো হিউম্যান কারেকটার হওয়া উচিত না। জাপানের মানুষ, আমেরিকার মানুষ, কানাডার মানুষ পারলে আপনি কেন পারবেন না? আপনারতো তাদের মতোই চোখ, নাক, কান, মুখ সবই আছে। তাই আমি মনে করি আমরাই পারব। আমরাই পারব। আমরা অবশ্যই পারব। একদিন আমেরিকা থেকে ডলার খরচ করে আমাদের দেশে পড়তে আসবে।
২. আমি মনে করি আমার দেশকে যদি আমেরিকার চেয়ে উন্নত করতে চাই তাহলে সত্য কথা বলতে হবে। টেকনিক্যাল কথা বলা যাবে না, নিজের দোষ অন্যের গায়ে দেওয়া যাবে না। যদিও আমি জানি সত্য কথা বলার সাহস লাগে। আমার সেই সাহস আছে। আমি মনে করি ১ কোটি লোকের মধ্যে এক জনেরও যদি সেই সাহস থাকে তবে আমার সেই সাহস আছে। তবে মাঝে মাঝে দেশের কল্যানের জন্য আমি সেই সাহস স্যাক্রিফাইস করি। যেমন আমি যা পছন্দ করি না সেই মতাদর্শের কোন কথা আমি বলি না। সেই মতাদর্শের কোন মানুষ যদি তার চিন্তার সত্য কথা বলতে বলে তা আমি বলি না।আমার কথা তার চিন্তা সে বলুক। তার চিন্তা কেন আমাকে দিয়ে বলাবে। কিন্তু আমার চিন্তার সাথে তার চিন্তা মিল থাকলে আমি তার চিন্তা আমি বলি। আমি মনে করি শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন সিলেবাস আমার যদি অপছন্দ হয় তাহলে অবশ্যই সেটা দ্বারা দেশ জাতির অকল্যান হবে আর সেই সিলেবাস কারিকুলাম আমার পছন্দ হলে অবশ্যই সেটা দ্বারা দেশ জাতির কল্যান হবে। কারন আমি কখনই নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করি না সব সময় আমি গরিব অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করি। আমার এক ফেসবুক বন্ধু ইন্ডিয়াতে থাকে। সে মমতা ব্যানার্জি দিদির রাজনীতি করে। একজন তাকে বলেছেন আপনি তো দিদির চামচামি করেন? তিনি বলেছিলেন যে লোকজন যখন মহাত্মা গান্ধী, জহওরাল নেহেরুর কথা বলে তখন আপনি তাদের চামচামী বলেন না অথচ আমি মমতা দিদির কথা বললেই কেন আমাকে চামচামী বলেন? তারাও তো কোন না কোন আদর্শের কথা বলেন। তবে যাই হোক যিনি চামচামির কথা বলেছিলেন তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। মনে করুন আমি কোন একটি কথা কাউকে বললাম যেমন আপনি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে বিদ্যুৎ কুমার রায় পড়ালেখার একটি সিস্টেম আবিস্কার করেছে সেই সিস্টেম ফলো করলে দেশে ছাত্রদের কোন কোচিং করতে হবে না প্রাইভেট পড়তে হবে না। আমাকে সাথে সাথে সেই লোকটি বলবে এই কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে সে কি চাকরি হারাবে? আমার কিন্তু বিশ্বাস হয় না যে আমাদের মানবতার প্রতিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে দেশ জাতির কল্যানমুলক কোন কথা বললে কারো চাকরি চলে যাবে। যাই হোক আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই কিন্তু বলার স্কোপ পাই না। অনেকে বলেন আপনি শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে বলেন। কিন্তু আমি কি বলব মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় ভীষণ ব্যস্ত। বহুবার চেস্টা করেও আমি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের কাছে এই কথা বলার সুযোগ পাই নাই। অনেকে বলেন ফেসবুকে লিখলে চাকরি চলে যাবে। আমি বলি আমি ফেসবুক যদি কোন কিছু লিখে আমার দেশকে আমেরিকার চেয়ে উন্নত করার কোন পরিকল্পনা দেওয়ার চেস্টা করি তাও কি আমার চাকরি চলে যাবে? আসলে যারা আমার চাকরি খাবে তারা দেশের মঙ্গল চায় না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ তারা ধারণ করে না। যাকেই বলি আপনি এই কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন সেই বলে আমি কি চাকরি হারাব? কিন্তু দেশ জাতির শিক্ষা ব্যাবস্থা চেঞ্জ করে আমেরিকার চেয়ে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললে চাকরি তো কেউ হারাবেই না বরং তাদের প্রোমোশন হবে। আমি বলতে চাই কিন্তু সুযোগ পাই না। সবাই কেমন যেন জুজু বুড়ির ভয় পায়।
৩. আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন যে একজন ভারতীয় বংশউদ্ভুত ঋষি সুনক যদি ব্রিট্রেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেন না? আপনি না পারতে পারেন কিন্তু আমার বিশ্বাস আমি পারব তাইতো কিভাবে কোন দিক দিয়ে দেশের উন্নতি হয় আমি সব সময় সেইটা নিয়ে চিন্তা করি। কেউ যদি বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় দেশের উন্নতি, নিজ এলাকার উন্নতির কথা চিন্তা করে আমি সেই জায়গায় ছুটে যাই। তেমনি আমি ছুটে গিয়েছিলাম আলোকিত ১১ নং ইউনিয়নে। আলোকিত ১১ নং ইউনিয়ন, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর কর্তৃক ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে একটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণের সহকারি পরিচালক শরফুদ্দিন ইউসুফ শান্ত সেই অনুষ্টান পরিচালনা করেছিলেন। মোটামুটি কয়েকজনকে বলা হয়েছিল। তারা এসেছিল তাদের এলাকার ১১ নং ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের পাঠাগারের উন্নয়ন করার সমস্যা বলার জন্য এবং সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য উপায়গুলো বলার জন্য এসেছিলেন। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তাদের আলোচনা শুনে। কিভাবে ১১ নং ইউনিয়নের ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সকল ছাত্র পাঠাগারে এসে বই পড়ে নিজে আলোকিত হবে এবং এলাকাকে আলোকিত করবে তার জন্য তারা কর্ম পরিকল্পনা করতে এসেছিল। তাদের ইচ্ছা বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের ইউনিয়ননের মানুষদের দেখতে আসবে, শুনতে চাইবে কিভাবে সকল বাধা অতিক্রম করে সকল ছেলে বই পড়ায় অভ্যস্ত হয়েছিল। তাদের কথা তারাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে বিভিন্ন পাঠাগারের দায়িত্বরত ব্যক্তিগণ নিজের টাকা খরচ করে, মাইক্রোভাড়া করে তারা সেই সুদুর চাঁদপুর থেকে ঢাকায় প্রোগ্রামে যোগদান করতে এসেছিলেন। তাদের পাশের ইউনিয়নের একজন ব্যক্তি এসেছিলেন তার নামটা মনে নাই। তিনি যা বললেন তা ভীষণ ইন্সপায়ারমুলক। তিনি বললেন তিনি চাদা তুলে কাউকে কোনদিন দাওয়াত করেন না। তিনি সব একাই নিজের টাকা খরচ করে প্রোগ্রাম করেন। তিনি চিন্তা করেন যে কাজ তার করা দরকার এবং যে কাজ করার কথা কেবল তারই মনে হয়েছে সেই কাজ তো অন্যজনের মনে হয় নাই। তাই সমাজের উন্নতির জন্য সেই কাজ করার জন্য তিনি নিজেই প্রোগ্রামের আয়োজন করেন, নিজের টাকা খরচ করে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেন, এবং সেই অনুষ্টানে সবাইকে অনুরোধ করেন তারা সবাই যেন দেশের জন্য নিজের এলাকার জন্য কল্যানমুলক কাজ করেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। আমি মনে মনে ভাবলাম সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে ম্যাসেজটা দিতে পারছে না আলোকিত ১১নং ইউনিয়ন এর পাশের ইউনিয়নের সেই ব্যক্তি এলাকার সেইরকম উন্নয়ন করে চলছে। সমাজের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটে এরকম ভালো মানুষ রয়েছে। আমরা যদি তাদেরকে খুজে বের করে একত্রিত করি তাহলে বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়ে উন্নত হতে বেশি সময় লাগবে না।
৪. আলোকিত ১১ নং প্রায় ৫০ জন আসার কথা ছিল কিন্ত দেশের উন্নতি করার জন্য প্রায় ৬৫ জন এসেছিলেন।তাদের এক এক মানুষকে মনে হয়েছিল এক একজন বীর। সবাই তাদের বক্তব্য দিয়েছিলেন। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অন্য কেউ না করলে সে নিজেই দায়িত্ব হাতে নিবে। তাদের আলোকিত ১১ নং ইউনিয়ন এর এলাকায় কিছু মানুষ আছে যারা এলোমেলো সময় কাটায় তাদেরকে কিভাবে ভালোবাসা দিয়ে পড়ালেখায় ফিরে আনা যায় তারা তার পরিকল্পনা করে। সবার নাম মনে নাই তাই সবার কথা লিখতে পারলাম না তবে কয়েকজনের সাথে আমার পার্সোনাল কথা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের চিন্তাভাবনা দেখে আমি ভীষন অভিভুত। শাকিল আহমেদ একজন অসাধারণ মানুষ। তার চোখে স্বপ্ন একদিন আলোকিত ১১ নং ইউনিয়নে বিশ্ববরেণ্য হবে। একজন ছাত্র ইকরাম। সে ব্লাড ডোনেশানের সার্বিক কার্যক্রম করে। রাসেল একজন এক্সিলেন্ট মানুষ। এলাকার মানুষের উন্নয়ন করার জন্য ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে। মাসুদ রানা ভাই, শাহাদত স্যার, রিয়াজুল হাসান স্যার, আবু ইউসুফ ভাউ, সুমন ভাই, শান্ত ভাই, জাভেদ ভাই এরা সবাই এতটাই আবেগপ্রবণ ছিল যে এলাকার উন্নয়নের যা করা দরকার তারা তাই করবেন। প্রয়োজনে মানুষের হাতে পায়ে ধরে মানুষকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে ভালো পথে নিয়ে আনবেন। এতসব ভালো কোয়ালিটি থাকার পরেও আপনি কি বলবেন বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়ে পিছিয়ে থাকবে? আমি মনে করি বাংলাদেশ অবশ্যই একদিন আমেরিকাকে নেতৃত্ব দিবে।
বিদ্যুৎ কুমার রায়।
সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ
২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা, নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক।