ফুটপাতে পথচারী হাঁটার জায়গায় একের পর এক অবৈধ অস্থায়ী দোকান।কোনোটি ভাতের হোটেল,কোনোটি চায়ের দোকান,আবার কোনোটি সিগারেট বা ভাজাপোড়া বিক্রির দোকান।কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে দোকান চলে গেছে সড়কে।বাধ্য হয়ে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে হাঁটতে হয় সড়ক দিয়ে।অনেকটা কোটি টাকা তৈরি ফুটপাতে লক্ষ টাকার ব্যবসা করার মতো ঘটনা।শুধু লক্ষিপুরেই নয়,এমন ঘটনা এখন নগর জুড়েই চলছে।
এমন দৃশ্য রাজশাহী নগরীর লক্ষিপুর এলাকার। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে পশ্চিমে ঝাউতলার মোড় ও দক্ষিণে সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত বেশির ভাগ সড়কের পাশেই এমন চিত্র।ফুটপাত দখলের কারণে যানজটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছে নগরীর বাসিন্দারা।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছে,ফুটপাত ও রাস্তা হকারদের দখলে থাকায় নগরীতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা মারাত্মক সমস্যায় পড়ছে।প্রতিনিয়ত যানজটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে,চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।কিছু কিছু হকার এলাকায় চুরি,মাদকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে।ফুটপাত দখলকারীদের অরাজকতায় স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,অবৈধ এসব দোকান থেকে সকাল ও সন্ধ্যার পরে পালা করে ২০ থেকে ৮০ টাকা দোকান ভেদে তোলা হয়।দেড় শতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন ন্যূনতম প্রায় ২০ হাজার টাকা তোলা হয়,যা মাসিক হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখ টাকা।আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় কয়েক লাখ টাকা কালেকশন করা হয়।প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যার পরে পালা করে লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের কনস্টেবল জাবেদ এবং তার সহযোগী মামুন ও ইমন নামে দুই ব্যক্তি এই চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে থাকেন।(ভিডিও সংরক্ষিত)
কৌশলে দোকান নিতে ফুটপাতের এক দোকানদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান,এখানে সহজে কোন দোকান পাবেন না। দোকান পেতে হলে লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ ও তার সহযোগী ইমনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।দোকান পেতে আপনাকে প্রথমে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও প্রতিদিন ২০ থেকে ৮০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। তাহলেই আপনি ফুটপাতে দোকান দিতে পারবেন।
এদিকে ফুটপাত বিক্রি করে প্রতি মাসে পুলিশ বক্সের মাসিক আয় লক্ষ লক্ষ টাকা।যদি কেউ কোনো কারণে চাঁদা না দেয়,তাহলে তার দোকান বন্ধ করে দেয় বক্স পুলিশ।ইতিপূর্বেও এই বক্স নিয়ে নানা সময় চাঁদা নেওয়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ মানিক মিঞা’র কাছে চাঁদা তোলার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে,তিনি পুলিশ বক্সে ডেকে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে আরএমপি’র মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন,এ বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়,তবে তা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কনস্টেবল চাঁদা তুলতে পারেন কি না জানতে চাইলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন,আপনি একটা অভিযোগ দেন আমরা ব্যবস্থা নিবো।
সাংবাদিক কেনো অভিযোগ দিবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,যে কেউ অভিযোগ দিতে পারে।আমরা শুধু যানজট নিরসনে কাজ করি, উচ্ছেদ করার নয়।
কথা বললে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন,ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আমাদের অভিযান চলমান আছে।আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান করি,তবে অভিযান শেষে আবার ফুটপাত দখল হয়ে যায়।এ বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারি জরুরি।অবৈধ সুবিধা পেতে সুন্দর নগরীর ফুটপাতগুলো দখল দিচ্ছে কিছু অসাধু প্রশাসন ও স্থানীয় নেতা।