সকাল সাড়ে ৯টা, বাড়িতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে নতুন জামা পরে মামাবাড়িতে যাওয়ার জন্য মা ও মামার সঙ্গে রওনা হয় কাওছার(১৭) ও সাদিয়া(১৩)।
সকাল সোয়া ১০টায় নাটোর হরিশপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিয়াম পরিবহনে ওঠে তারা।
এক বছর পর মামাবাড়িতে যাওয়ার আনন্দে মেতে ছিল দুই ভাই-বোন। কিন্তু তা আর হলো না। দ্রুতগতির দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাদের সেই আনন্দটুকু কেড়ে নেয়। এ সময় মা হেলেনা ও মামা আব্দুল জলিলও আহত হন। দুই ভাই-বোনের মৃত্যু খবরে পুরো গ্রামের শোকের ছায়া নেমে আসে।
শনিবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রামের মহানভাঙ্গা এলাকার স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত হয় ৭ জন।
নাটোর সদর উপজেলার পাইকোরদৌল গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ (২০) ও তার ছোট বোন সাদিয়া খাতুন (১২) অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টায় তাদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
এলাকাবাসী আব্দুল রহিম বলেন, সকালে মায়ের সঙ্গে মামা বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হয়। এক ঘণ্টা পরই খবর আসে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেছে। তাদের পরিবারে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো আমাদের ভাষা নেই।
নিহতের মামা আব্দুল জলিল বলেন, চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। আমার বোন হেলেনা ছেলে ও মেয়েকে হারিয়ে এখন নির্বাক। কীভাবে তিনি এ শোক সইবেন জানি না।
উল্লেখ্য, শনিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ন্যাশনাল পরিবহনের একটি বাস রাজশাহী অভিমুখে যাচ্ছিল। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মহিষভাঙ্গা এলাকার গাজী অটো রাইস মিলের সামনে পৌঁছালে ন্যাশনাল বাসটি সামনে থাকা অপর একটি বাস অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিয়াম পরিবহন নামের একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় সিয়াম পরিবহন ছিটকে গিয়ে গাজী অটোরাইস মিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ন্যাশনাল পরিবহনও মহাসড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কিছুটা নেমে যায়। এতে ন্যাশনাল পরিবহনের ৫ যাত্রী ও সিয়ামের ২ যাত্রী নিহত হন। উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে বাসে থাকা অন্তত ২০ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।