বাগাতিপাড়া প্রতিবেদক: নাটোরের বাগাতিপাড়ার চাষি আব্দুল বারী বাকী। তিনি থাই পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আম চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। শুরুতে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন কোটি টাকার মালিক তিনি। শুধু তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন তা নয়, বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছেন।
মৃত্তিকা পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কীটনাশক ছাড়াই তিনি এখন প্রায় দুশ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা, ৪৫ বিঘায় দার্জিলিং ও চায়না কমলা, ৪৫ বিঘায় মাল্টা, ২৪ বিঘায় কাশ্মীরি কুল ও ১০ বিঘা জমিতে গোড়মতি আম চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত এইসব ফল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বাকী বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। সেই স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস থেকেই পথ চলা। মাঝপথে প্রতিবন্ধকতা আসে। তারপরও হতাশায় রাতের ঘুম নষ্ট না করে আগামী দিনের সোনালী স্বপ্নকে বুকে লালন করে অবশেষে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও নানা প্রতিকূলতায় পড়াশুনা আর এগোতে পারিনি। তবে স্কুলের গÐি পেরোনো আত্মপ্রত্যয়ী ছেলেটির স্বপ্ন বুনন শুরু হয় তখন থেকেই। চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় পড়াশুনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হন। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। ছোটবেলা থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন কৃষিক্ষেত্রে নিজেকে স্বাবলম্বী করার। সেই থেকে শুরু করেন পেয়ারা ও পেঁপেসহ নানা ফলজ চাষ। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুরে্যাগে তার ফলের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও থেমে থাকেননি তিনি। নতুন করে সাহস সঞ্চার করে ঝুঁকি নিয়েছেন ঘুরে দাঁড়াবার।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মমরেজ আলী বলেন, লাখ টাকা বিনিয়োগ করে থাই-পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আম চাষি এখন কোটি টাকার মালিক। ৬ বিঘা দিয়ে শুরু করা বাগান এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ বিঘায়। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা পরীক্ষাগার থেকে মাটি পরীক্ষা করে কীটনাশক ছাড়াই থাইপেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আম চাষ করছেন তিনি।
প্রতিবেশী ও সমাজসেবী মহিদুল ইসলাম মনি বলেন, নিজের পাশাপশি এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও আশার সঞ্চার করে যাচ্ছেন বাকী। তার ফলজ বাগানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। প্রতিজন শ্রমিকের মজুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আব্দুল বারী বাকীর নিজস্ব জমির পরিমাণ কম হলেও প্রতি বিঘা আট থেকে ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে তিনি এখন নিজ এলাকার পাশাপাশি লালপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রায় সাড়ে তিনশ বিঘা জমিতে ফলজ চাষ সম্প্রসারণ করেছেন।
পেয়ারা বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের সর্দার মাসুম ও মানিক চন্দ জানান, বাকী ভাই পেয়ারা চাষ করাতে আমরা নিয়মিত কাজ পেয়েছি এবং তার দেওয়া পারিশ্রমিক দিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সংসারের উন্নতি করছি।
বাগাতিপাড়ায় কর্মরত সাবেক উপজেলা তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকারের অনুপ্রেরণাতেই তিনি থাই পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন বলে জানান বারী। শুরুতে তিনি পুঠিয়ার এক চাষির কাছ থেকে থাই পেয়ারার চারা নিয়ে বাগান করেন। প্রথম দিকে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেও এখন কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কৃষি ঋণ এবং সরকারিভাবে অন্যান্য সহায়তা পেলে আগামীতে পেয়ারার বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি ড্রাগন, শরিফা, হাই ব্রিড নারকেলসহ উন্নত ফলের চাষ করতে চান বাকি।
তিনি দাবি করেন, কীটনাশক ছাড়া পেয়ারা চাষ করতে পলিথিনের ব্যাগ প্রয়োজন। তবে আইনী বাধ্যবাধকতার জন্য নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। থাই-পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আম চাষের মতো অন্যান্য পুষ্টিকর ফলকে কীটনাশকের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে সরকারিভাবে পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা উত্তরণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাষিদের প্রাণের দাবি মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, আব্দুর বারী বাকীকে একজন সফল চাষি বলা যায়। তার ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযেগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি, ড্রাগন, শরিফা, হাই ব্রিড নারকেলসহ অন্যান্য ফলের চাষ করতে চাইলে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হবে।
স্থানীয় সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল এই ফলজ বাগান পরিদর্শন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাকীসহ নির্বাচনী এলাকার যে কোনো উদ্যোক্তা আমাকে পাশে পাবেন সব সময়। তাদের যেকোনো সমস্যা আমাকে বললে যতটুকু পারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।