নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার যোগিপাড়া গ্রামসহ গ্রামের অন্তত ২০ জন নারী কৃষি ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রমেজান বেগম (৫০) কলেজ পড়ুয়া দুই কন্যা সন্তানের জননী। তিন বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। পুরো সংসারের হাল তার কাঁধেই। কিন্তু পাঁচ শতকের ভিটে জমি ছাড়া সম্বল নেই। পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
রমেজান বেগম জানান, স্বামী আব্দুল জব্বার মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়ি। দুই মেয়েকে নিয়ে কি করবো? এরপর সিদ্ধান্ত নেই পরের বাড়ি আর মাঠে কাজ করবো। তিন বছরে মাঠে কাজ করছি। বড় মেয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আর ছোট মেয়ে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে। আমি ছাড়া পৃথিবীতে ওদের কেউ নেই। ওদের জন্য আমার এত পরিশ্রম। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠি। পরের বাড়ি কাজ করি। সকাল সাড়ে ৬টায় মাঠে চলে আসি। বেলা দেড়টা পর্যন্ত সবজি ক্ষেতে কাজ করি। মজুরি পাই ২০০ টাকা। পুরুষের সাথে একই জমিতে সমান কাজ করি। কিন্তু মজুরির বেলায় কম পাই। কিন্তু কিছু বলি না। সব নারী কম মজুরি পায়। কাজের সুযোগ পাচ্ছি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার।
১৫ বছর আগে কৃষিকাজ শুরু করেন জোসনা বেগম। তখন মজুরি পেতেন ৫০ টাকা। এখন পান ২০০ টাকা। সময়ের ব্যবধানে তার মজুরি বেড়েছে। কিন্তু সেই মজুরি বৈষম্য এখনও আছে। বাড়ির কাজ সামলে কৃষি ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করছেন। স্বামী আছমত আলী পেশায় ভ্যানচালক। স্বামী-স্ত্রীর উপার্জনের টাকায় চলছে চার সদস্যের সংসার।
জোসনা বেগম বলেন, অভাবের সংসার। স্বামীর উপার্জনে সংসার চলে না। তাই নিজেই মাঠের কাজে নেমে পড়েছি। প্রতিদিন সকালে প্রথমে সংসারের কাজ করি। সকাল ৭টার মধ্যে পরের সবজি ক্ষেতে কাজে চলে যায়। পরের জমিতে কাজ করে ২০০ টাকা পায়। পুরুষের সমান কাজ করলেও মজুরি পাই না। পুরুষের চেয়ে ১০০ টাকা কম পাই।
‘আট বছর ধরে পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালায়। পুরুষ মানুষ বেশি কথা বলার সুযোগ পায় না। কিন্তু বাড়ির আশপাশের, কিংবা পাড়ার মহিলারা পিছু কথা বলে। অনেকে উপহাস করে। তাদের কথায় কিছু মনে করি না। না খেয়ে থাকলে কেউ আমাকে দেবে না।’ কথাগুলো বলছিলেন গালিমপুর মসজিদ মোড় এলাকার টুলু বেগম (৪৭)। তিনি সংসারের কাজের পাশাপাশি গ্রামে অন্যের সবজি ক্ষেতে কাজ করেন। ২০০ টাকা মজুরিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্রম দেন।
শুধু জোসনা বেগম, রমেজান বেগম কিংবা টুলু বেগম নয়, তাদের মতো অনেকেই বছরের পর বছর মজুরি বৈষম্যের শিকার। তবুও তারা জীবিকার তাগিদে সেটি মেনে নিয়েই কাজ করছেন।