নাটোর হবে ‘সাইকেল স্টান্ট জেলা’ -প্রত্যাশা সাইকেলপ্রেমীদের
স্টাফ রিপোর্টার: অনলাইন বা আড্ডায় মত্ত না হয়ে সাইকেল নিয়ে মাতোয়ারা হয়েছে নাটোরের কিছু টগবগে প্রাণ। তাদের কাছে কৈশোর আর তারুণ্য মানেই সাইকেল স্টান্ট। বিগত পাঁচ বছরের নিরলস প্রশিক্ষণ তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। নাটোরের পরিচিতির ঝুলিতে সাইকেল স্টান্ট জেলা হিসেবে পরিচিত করানোর অদম্য ইচ্ছা তাদের।
শেখ রিফাদ মাহমুদের নেতৃত্বে নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ নামে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ২০১৫ সালে। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৩০ এর উপরে। শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম এলাকার বিকেলটা যেন একান্তই ওদের। সাইকেল নিয়ে নানা কসরতে মুখর ওরা। সুনিপুণভাবে সাইকেলের একটি অংশে শরীরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাই যেন লক্ষ্য। স্টান্ট শুধু খেলা নয়, শিল্পও বটে। তাই খুব সহজেই দর্শনার্থীদের কাছে টানে।
শেখ রিফাদ মাহমুদ জানান, পোল্যান্ডে সাইকেল স্টান্ট খুবই জনপ্রিয়। প্রতিবছর সেখানে আন্তর্জাতিক সাইকেল প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে। ইউটিউবে সাইকেল স্টান্ট ভিডিও দেখে আগ্রহ তৈরী হয় আমাদের। ক্লাসের সহপাঠীদের সাথে করে ২০১৫ সালে শুরু। এরপর একই ক্লাসের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন ক্লাস, শেষে সমবয়সী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্টান্টের প্লাটফর্ম হয়ে ওঠে অনেক বড়। গঠন করা হয় নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারস্।
রাজশাহী, নওগাঁসহ বেশ কয়েকটি জেলায় স্টান্ট প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ এর সদস্যরা। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সাইকেল ফেডারেশনের আয়োজনে ঢাকাতে স্টান্ট প্রতিযোগিতা আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়।
পরিবেশ সচেতনতার কারণে দেশে ও বিদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সাইকেলের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। শুধু গন্তব্যে যেতেই নয়, এর বাহকরা সাইকেলের বহুমুখী ব্যবহারে তৎপর হয়ে উঠছেন। ভবিষ্যতে সাইকেল রেস, সাইকেল স্টান্টসহ সাইকেলের ইভেন্টগুলো আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ এর অন্যতম সংগঠক তানভীর আকাশ বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ সাইকেল ফেডারেশন সাইকেল স্টান্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রতিবছর বহাল রাখুক।
নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ এর সভাপতি শেখ রিফাদ মাহমুদ বলেন, নাটোর শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন আমাদের অনুশীলনের স্থানটিতে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন অন্য জায়গাগুলোও এখন আর খালি থাকছেনা। এ পরিস্থিতিতে আমাদের অনুশীলন স্থানের সংকট সমস্যায় আছি আমরা। তাই বর্তমানে অনুশীলনটা শুক্রবার সকালে সীমিত হয়ে পড়েছে।
নাটোরে স্টান্টকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্টান্টার রিফাদ আরো বলেন, নাটোরকে সাইকেল স্টান্টের শহর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজি বলেন, অতীতের নাটোরে সাইকেল খুবই জনপ্রিয় ছিলো। স্বাধীনতা দিবসের আগে ২৫ মার্চের রাতে শহরের লালবাজার, গাড়িখানা, শুকুলপট্টি, কাপড়িয়াপট্টি, পিলখানার গোল চত্বরটিতে নাটোর পৌরসভা সাইকেল রেস আয়োজন করতো। অসংখ্য প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে ঐ প্রতিযোগিতা ছিলো শহরের আকর্ষণীয় উৎসব। এ প্রতিযোগিতা পরে আর চালু থাকেনি। নতুন সংযোজন হিসেবে নাটোরে সাইকেল স্টান্ট অবশ্যই জনপ্রিয় হবে। স্বাধীনতা দিবসের সাইকেল রেস প্রতিযোগিতা পুনরায় চালুসহ শহরের রাস্তায় পৃথক সাইকেল লেন তৈরীর দাবি করেন এ শিক্ষক।
নাটোরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো: শাহরিয়াজ পিএএ বলেন, সাইকেল স্টান্ট অনুশীলনের জন্যে একটি জায়গার বন্দোবস্ত প্রদানে জেলা ক্রীড়া সংস্থা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।