নেই কোনও ডিগ্রী। তারপরেও নামের আগে ডাক্তার পদবী। তাও শুধু ডাক্তার পরিচয়ে পরিচিত নন তিনি। বাহারী নাম ‘আগুন-পানির ডাক্তার’ হিসাবে পরিচিতি ছড়িয়েছে চারিদিকে। সর্বরোগের চিকিৎসা করেন নাটোর সদর উপজেলার লালমনিপুর গ্রামের এক কথিত ডাক্তার মিনহাজ আলী। রয়েছে তার সহকারীও। যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীর সংখ্যাও কম নয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটা ঔষুধের দোকানের সামনে ভীড় করে আছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন বয়সী রোগী। এরই মাঝে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ভ্যান গাড়িতে শোয়ানো এক নারী রোগীকেও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাক্তার মিনহাজ আলী। পাশেই রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখে দিতে ব্যস্ত তার সহকারী সুজন আহমেদ। চিকিৎসা শাস্ত্রের কোনও ডিগ্রি না থাকলেও মিনহাজ আলীর নামের আগে ডাক্তার পদবীসহ পরিচিতি ‘আগুন পানির ডাক্তার’ হিসাবে। কিভাবে অদ্ভুত বাহারী এই নামের পরিচিতি, স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেল সেই কথা।
লালমনিপুরের বাসিন্দা মোস্তফা জানান, আগুনে যেমন পানি দিলে দ্রæত আগুন নিভে যায়। তেমনি মিনহাজ ঔষুধ দিলে সব রোগ ভাল হয়ে যায়। এজন্যই স্থানীয়রা তার নাম দিয়েছে আগুন পানির ডাক্তার।
একই গ্রামের আকরাম হোসেন জানান, ডাক্তারী কোনও ডিগ্রি না থাকলেও আগুন পানির ডাক্তার হিসাবে মিনহাজ আলীর পরিচয় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই গ্রামে এসে আগুন পানির ডাক্তারের খোঁজ করেন। দুরদুরান্ত থেকে লোকজন এসে চিকিৎসা নেন।
চিকিৎসা নিতে আসা হালসার রাবেয়া বেওয়া জানান, হাতে পায়ের ব্যথার জন্য মিনহাজ ডাক্তারের কাছে আসিছি। মানুষ বলে তার ঔষুধে সব রোগ ভাল হয়্যা যায়। চার পাঁচ প্রকারের ঔষুধ দিছে। খ্যায়্যা দেখি মুক্তি মিলে কিনা।
কথিত ডাক্তারের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে পরিচয় গোপন করে নাটোরের রামাইগাছি এলাকার ভিডিও জার্নালিষ্ট হাসিবুল হাসান শান্ত যান মিজহার আলীর কাছে। ওই ভিডিও জার্নালিষ্ট বুকধরপর ও জ্বরের কথা জানাতেই কথিত ডাক্তার মিনহাজ আলী থার্মেমিটার দিয়ে জ্বর মেপে জ্বর পরিমান অনেক বেশী উল্লেখ করে এন্টিল, লোটিল, ওরাকর্ট, নাপা ৫০০এমজিসহ অটোসিল নামে সিরাপ দিয়ে দেন। পরে দেখা যায় ঐ অটোসিল সিরাপটি ২-৫ এবং ৫-১০বছরের শিশুদের জন্য প্রযোজ্য।
তবে সর্বরোগ বিশারদ মিনহাজ আলী জানান, কোনও ডিগ্রি না থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছরের গবেষণায় দেন সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া থেকে তার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। আগামী ২ বছর গবেষণা করার পর আর কোনও রোগীকে মাদ্রাজ, চেন্নাই যেতে হবেনা। নাটোরে থেকেই সব ধরণের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেবেন তিনি। এছাড়া ডিগ্রি কোন বিষয় না। মানুষের অভিজ্ঞতাটাই বড় বলে জানান তিনি। কি ধরণের গবেষনা করেছেন এমন প্রশ্নের কোনই সদুত্তর দেননি তিনি।
নাটোরের সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, অপচিকিৎসার বিষয়টি তার জানা নেই। এ ধরণের চিকিৎসরা বেশীরভাগই স্টেরয়েড বা হাই এন্টিবায়েটিক জাতীয় ঔষুধ দিয়ে থাকেন। যা পরবর্তীতে রোগীদের অনেক ক্ষতির কারণ হিসাবে দেখা দেবে। দ্রæতই আইনশৃঙ্খলাবাহিনির সহায়তা নিয়ে কথিত ডাক্তার মিনহাজকে আইনের আওতায় আনা হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, নাটোরের যে কোন উপজেলায় বা যে কোনও গ্রামে যদি অপচিকিৎসার খবর আমরা পাই। তৎক্ষনাৎ আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তির ব্যবস্থা করি। এরপরও যদি নাটোরে কেউ অপচিকিৎসা করে। তাহলে এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রæত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।