টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নাটোরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম ইউনিব্লকের রাস্তা। নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয়ে ১.৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টিনন্দন সুলতানপুর-আওরাইল রাস্তাটি ইউনিবøক দিয়ে নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে গত বছরের ২৩ মার্চ এলজিইডি’র জেলা পর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরকে জানানো হয়, দেশের ভৌগলিক পরিবেশ এবং ট্রাফিক চলাচলের দিক বিবেচনায় প্রচলিত পদ্ধতির সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব ইউনিবøক দ্বারা সড়ক নির্মাণ বা মেরামত অপেক্ষাকৃত বেশী উপযোগী ও কার্যকর। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ‘গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্প’ এর আওতায় ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনপদের সড়কসমূহ ইউনিবøক দ্বারা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আরো বলা হয়, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পাঞ্চল বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ইট তৈরীতে জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার খাদ্য উৎপাদনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও ইট পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই গ্রাম ও নগর এলাকার সড়কসমূহে গতানুগতিক বিটুমিনাস কার্পেটিং ও আরসিসি’র বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব ইউনিবøক ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করা প্রয়োজন। এ সড়ককে জলবায়ু সহিষ্ণু হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
অধিদপ্তরের উল্লেখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে নাটোর জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ইউনিবøকে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত অর্থ বছরে পাইলট হিসেবে নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয়ে ১.৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সুলতানপুর-আওরাইল রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। তিন মিটার প্রস্থ রাস্তার উভয় পাশে আবার ছয় ইঞ্চি করে কংক্রিটের কার্ভষ্টোন রাস্তাকে আরো টেকসই করেছে। সিমেন্ট বালি আর পাথরে ৫০, ২৫, ১৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতার এক একটি ইউনিবøকের চাপ ধারণ ক্ষমতা ইটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশী। বালির বেডে বিছানো বলে ভারী যানবাহনে রাস্তা দেবে যাওয়ার ভয় নেই। কংক্রিটের ইউনিবøকগুলোর মধ্যে দুই পাশে এবং মাঝে লাল রঙের বøক ব্যবহার করায় যানবাহন খুব সহজেই রাস্তার পরিমাপ অনুযায়ী চলতে পারছে এবং সৌন্দর্য বেড়ে গেছে বহুগুণে।
পাইলট সড়কসহ জেলায় মোট সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট কিলোমিটার মোট দৈর্ঘ্যের সাতটি সড়ক নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে জানা গেছে এলজিইডি অফিস সূত্রে। এ সড়কের পরিধি বাড়াতে জেলার সাতটি উপজেলার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ কাজের চাহিদাপত্র চেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীবৃন্দের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি অর্থ বছরে বিগত অর্থ বছরের নির্মাণাধীন ইউনিবøকের সড়কসমূহের নির্মাণ কাজ সমাপ্তের পাশাপাশি নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়েজমিনে সুলতানপুর-আওড়াইল সড়কে যেয়ে দেখা যায়, দু’ধারে সবুজের বুক চিরে দৃষ্টিনন্দন রাস্তায় অসংখ্য মানুষ হাঁটছেন। গ্রামের বধুসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন এ তালিকায়। আহম্মদপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব আহমেদ জানায়, পীচডালা রাস্তাটা দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। তাই আমাদের কাংখিত এ রাস্তা নতুন প্রযুক্তিতে ইউনিবøকে নির্মাণ করায় আমরা খুব খুশী। মোটর সাইকেল ¯øীপ করার ভয় নেই এ রাস্তায়। আবার দু’পাশে খানিকটা ঢালু থাকায় বৃষ্টির পানিও রাস্তায় জমে থাকছেনা। আওড়াইল মধ্যপাড়ার কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, আবাদী শস্য নিয়ে হাটে যেতে আর কোন চিন্তা নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ নাটোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এম শহিদুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গ্রামীণ জনপদের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে জেলার মোট দুই হাজার ৭৬ কিলোমিটার রাস্তা পর্যায়ক্রমে ইউনিবøকে নির্মাণ করে ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় কাজ করছি আমরা। নতুন এ প্রযুক্তির রাস্তা সারাদেশের মধ্যে নাটোরেই প্রথম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কাজের মান উন্নত হওয়ায় অনুসরণীয় হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব এই রাস্তার নির্মাণ খরচ একটু বেশী হলেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম এবং রাস্তার স্থায়ীত্ব অনেক বেশী। এই রাস্তা যানবাহনের অধিক ভার বহনের উপযোগী। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হলেও থাকবে নিরাপদ।