ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

                     ফাইল ছবি

আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদন অধ্যাদেশ দিয়ে আজ থেকে কার্যকর ** সাজার ক্ষেত্রে ‘যাবজ্জীবন’ শব্দের স্থলে ‘যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ড’ করা হয়েছে

 নারী ও শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত আইন কার্যকর হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ এই অধ্যাদেশ জারি করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী, ২০২০ অনুমোদন দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বর্তমানে সংসদের অধিবেশন না থাকায় এবং আইনটির কার্যকারিতা জরুরি হয়ে পড়ায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করে তা কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবারই এই অধ্যাদেশ জারির সম্ভাবনা রয়েছে এবং জারি হওয়ামাত্রই তা কার্যকর হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে গৃহবধূকে ছিনিয়ে নিয়ে গণধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নারীকে নির্মম নির্যাতনসহ দেশব্যাপী ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্ম দেয়। তারা রাজপথে নেমে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদের পাশাপাশি আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবি জানান। এরকম বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার ঘোষণা দেন। বিদ্যমান আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই বিধান সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হলো। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে সংশোধিত এই আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে অংশ নেন।

ধর্ষণের সাজায় পরিবর্তন :ধর্ষণের অপরাধে বিদ্যমান আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

এই ধারায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ কথাগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এছাড়া আইনের ৯(৪) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এই ধারায় সংশোধনী এনে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ কথাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আইনের ২০ ধারায় চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪-এর পরিবর্তে শিশু আইন, ২০১৩ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

শুধু সংশোধনে কাজ হবে না :আইন বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ ধরনের অপরাধ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণাদি, আলামত সংরক্ষণ, সর্বোপরি সামাজিক যে অবক্ষয়, সেটিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আইনি শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ, তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবার সবারই একটি সমন্বিত একাগ্রতা, আন্তরিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রয়োজন রয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দে র (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। আর এই সময়ে ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়।

যৌতুকের ক্ষেত্রে আপসের বিধান যুক্ত :গতকালের বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১(গ) ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। ঐ ধারায় যৌতুকে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগে আপসের বিধান ছিল না। এখন এই সংশোধনী আনায় এ ধরনের বিরোধে সেই সুযোগ সৃষ্টি হলো। আইনের ১১(গ) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো নারীকে তার স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য তাকে সাধারণ জখম করেন, তবে অনধিক তিন বত্সর কিন্তু অন্যূন এক বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। এই ধারায় সংঘটিত অপরাধে মামলা হলে তা আপসের সুযোগ ছিল না। কিন্তু ‘সফিকুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট ঐ ধারা আপসযোগ্য করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেয়। ঐ নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে।

সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

  • Online News

    Related Posts

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন, নাটোর জেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, নাটোর মহোদয়ের নিকট “এপ্লিকেশন টু দ্য চিফ অ্যাডভাইজার” স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বেসরকারি কলেজ সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স…

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    নাটোরে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করা বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদকে সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে দলটি। তিনি নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব…

    You Missed

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    ঘটনার ৭ বছরপর সাবেক এমপি পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে গুমের মামলা

    ঘটনার ৭ বছরপর সাবেক এমপি পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে গুমের মামলা
    প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা-পর্ব: ১

    টানা ৪র্থ বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম

    টানা ৪র্থ বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম

    ডাকাতের প্রস্তুতি কালে পুলিশের অভিযানে ৬ ডাকাত আটক

    ডাকাতের প্রস্তুতি কালে পুলিশের অভিযানে ৬ ডাকাত আটক