জোনাইল ও চান্দাই ইউনিয়নে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে নয়-ছয়

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ও চান্দাই ইউনিয়নে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির তালিকায় প্রবাসী, মৃত ও অস্তিত্বহীনদের নাম দীর্ঘদিন ধরে চাল তুলে আত্নসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকের নামেই কার্ড থাকলেও তারা জানেই না যে তাদের নামে কেউ চাল তুলে নিচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে আবার কোথাও কোথাও একজনের নামে দুটি করে কার্ডও রয়েছে। এছাড়া কার্ডধারী অনেককেই দুতিন মাস চাল না দিয়ে পরে একবার দিয়ে কৌশলে সব মাসের স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে ডিলারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এসব ঘটনায় চাল বঞ্চিতরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, সরকার গরীব ও অসহায় মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছে। তিন বছর ধরে উপজেলার জোনাইল চারজন ও চান্দাই ইউনিয়নের তিনজন ডিলার প্রায় দুই শতাধিক প্রবাসী, মৃত ও অস্তিত্ব নেই এমন মানুষসহ গোপনে কিছু ব্যাক্তির নামে কার্ড করে তাদের নামে চাল তুলে আত্নসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জোনাইল ইউনিয়নে এক হাজার সাতশ’ ৯ জন ও চান্দাই ইউনিয়নে এক হাজার ৫০৬ জন দরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাভূক্ত করা হয়। এসব চাল বিক্রির জন্য জোনাইল ইউনিয়নে চারজন ও চান্দাই ইউনিয়নে দুই জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের তালিকা করে প্রায় তিন বছর ধরে এ কর্মসূচির চাল বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ তালিকার অনেকেই নিয়মিত চাল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, জোনাইল ইউনিয়নের চৌমুহন গ্রামের ভুট্টু প্রামাণিকের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড (কার্ড নং ১৬৩৫) হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। কিন্তু তিনি জানতেন না। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে ডিলার শ্রী গোপাল চন্দ্র সরকার পনের দিন আগে ডেকে নিয়ে এক বস্তা চালসহ কার্ডটি তাকে দেন। তবে তিনি মাত্র একবার চাল পেলেও তার কার্ডে তিন বছর ধরেই চাল নেয়ার টিপসই দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, আমি সই করতে পারি, এসব টিপ আমার নয়। একই গ্রামের ছামেরন বেগম (কা. নং ১৬৫২) দুবার চাল পেলেও ডিলারের লোক এসে কয়েকমাস আগে কার্ডটি নিয়ে গিয়ে আর ফেরৎ দেয়নি। জালাল উদ্দিনের (১৬৮৯) স্ত্রী আম্বিয়া খাতুনও জানান যে তাদেরকে ডিলার কোন চাল দেন না। প্রায় ৬ মাস আগে চৌমুহন গ্রামের রাশেদা বেগম (১৬৫৮) মারা যান, তবে তার নামে ঠিকই চাল উঠছে। একই ইউনিয়নের কচুগাড়ি গ্রামের ইরাক প্রবাসী আবু সাঈদের (৪৭৮) নামে নিয়মিত চাল উত্তোলন করা হলেও এ নামে কার্ড আছে বলেই জানেন না তার ছেলে মুরাদ হোসেন। অপরদিকে, চান্দাই ইউনিয়নের দিয়ার গাড়ফা গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেনের (কার্ড নং ৩২৩) নামে নিয়মিত চাল তোলা হলেও তার নামে কোন কার্ড হয়েছে এমনটি জানা নেই তার। ভান্ডারদহ গ্রামের হায়দার আলী (৫২৯) ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের (৫৫৯) দুজনের নামেই কার্ড রয়েছে, নিয়মিত চালও তোলা হচ্ছে। তবে বাবার নামে থাকলেও মায়ের নামে কার্ড থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন হায়দার আলীর ছেলে রাসেল। একই গ্রামের জমেলা বেগমের (৫১৪) নামে কার্ড থাকলেও বিষয়টি জানেন না তিনি। একই গ্রামের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আয়ুব আলীর নামে রয়েছে দুটি কার্ড যার নম্বর ৫৩৩ ও ৫৮১। তবে তার কাছে একটি কার্ডও নেই, তিনি কোন চালও পান না। একই ভাবে ঐ গ্রামের মৃত ওসমানের স্ত্রী আয়না বেগমের (কার্ড নং ৪৮৭ ও ৫৯২) এবং চান্দাই গ্রামের হাবিবুর রহমানের (কার্ড নং ৭৯৬ ও ৭১৯) নামে জনপ্রতি দুটি করে কার্ডে চাল তোলা হচ্ছে। এভাবে একই ভোটার আইডি নম্বর দিয়ে একজনের নামে দুটি করে কার্ড বহাল থাকলেও তা জানে না সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ভান্ডারদহ গ্রামে হাওয়া বেগম, দিয়াড়গাড়ফা গ্রামের জামাত আলী ও রেণু বেগম, রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আরশেদ আলী বেশ কিছু দিন আগে মারা গেলেও ডিলাররা তাদের নামে চাল তুলে আত্নসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জোনাইল বাজারের ওএমএস ডিলার শ্রী গোপাল চন্দ্র সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাল না দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে কারো কারো কার্ড নিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে কার্ড নিয়ে আসবে তাকেই আমরা চাল দিবো।
চান্দাই ইউনিয়নের গাড়ফা এলাকার ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, একই ব্যাক্তির নামে একাধিক কার্ড থাকার বিষয়টি আমি জানি না। তবে মৃত ব্যাক্তিরা কিভাবে চাল নেয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিকাশ চন্দ্রের মোবাইলে (০১৭১৬৭৩২৭৯৮) বারবার কল দিয়েও রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • Online News

    Related Posts

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন, নাটোর জেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, নাটোর মহোদয়ের নিকট “এপ্লিকেশন টু দ্য চিফ অ্যাডভাইজার” স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বেসরকারি কলেজ সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স…

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    নাটোরে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করা বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদকে সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে দলটি। তিনি নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব…

    You Missed

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    অনার্স-মাস্টার্স এমপিও ভুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার

    ঘটনার ৭ বছরপর সাবেক এমপি পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে গুমের মামলা

    ঘটনার ৭ বছরপর সাবেক এমপি পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে গুমের মামলা
    প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা-পর্ব: ১

    টানা ৪র্থ বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম

    টানা ৪র্থ বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম

    ডাকাতের প্রস্তুতি কালে পুলিশের অভিযানে ৬ ডাকাত আটক

    ডাকাতের প্রস্তুতি কালে পুলিশের অভিযানে ৬ ডাকাত আটক