চুরির অভিযোগ আনায় চন্দন সিং নামের ১৪ বছরের এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামে। চন্দন সিং পূর্বমাধনগর কলেজ পাড়া এলাকার প্রদীপ সিং এর ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, পূর্বমাধনগর এলাকার জনৈক আব্দুর রাজ্জাক এর পুকুরে মাছ চুরি হয়। এতে আব্দুর রাজ্জাক সন্দেহজনকভাবে এলাকার জনৈক ফটিকের ছেলে নাজমুলকে চিহ্নিত করে স্থানীয় বাজার কমিটির কাছে নালিশ করে।
বাজার কমিটির সভাপতি ডলার শুক্রবার বিকেলে এলাকার প্রধান আফজাল মৃধা ,আতাউর, হাফিজ, খাত্তাব, সাইফুল মেম্বার, মামুন কালু, সোহেল প্রমুখ এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। এই সালিশে অভিযুক্ত শামীম,ফয়সাল এবং চন্দন সিং নামে তিন কিশোর হাজির হলেও মূল অভিযুক্ত নাজমুল উপস্থিত না হওয়ায় সালিশ হয়নি।
এতে চুরির অভিযোগ আনায় বাড়ি ফেরার পথে চন্দন কোনো একটি কীটনাশকের দোকান থেকে ইঁদুর মারার গ্যাস ট্যাবলেট কিনে খায়। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মাধনগর (ডিগ্রী কলেজের পেছনে) মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে তার আত্মীয়-স্বজন উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক চন্দনকে রাজশাহী মেডিকেল করেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনো টাকা পয়সা না থাকায় তার সাথের লোকজন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে নলডাঙ্গা পৌরসভার অধীন বুড়িরভাগ এলাকার জনৈক পল্লী চিকিৎসক মাসুদ রানার কাছে নিয়ে যায়। সেখানে মাসুদ রানা তাকে চিকিৎসা না দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়র পরামর্শ দেন। সেখান থেকে মাধনগর নিয়ে যাওয়ার পথে রাত এগারোটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সালিশ বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক জানান, যেদিন মাছ চুরির ঘটনায় নাজমুলকে ধরা হয়, সেদিন কোনো একটি কাজে মাধনগর এ পুলিশ এসেছিল। সেদিন তাদের সামনে বিষয়টি জানালে তারা কাগজে লিখে নেন এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক বাজার কমিটির সভাপতি ডলারের কাছে মাছ চুরির ব্যাপারে একটি অভিযোগ দেয়া হয়। বাজার কমিটির সভাপতি জনৈক ডলার জানান, মাছ চুরির অভিযোগ পেয়ে তারা শুক্রবার বিকেলে এলাকার প্রধান দের সমন্বয়ে সালিশের আয়োজন করেন।
কিন্তু সেই সালিশে মূল অভিযুক্ত নাজমুল উপস্থিত না হওয়ায় আগামী রবিবার আবারো সালিশে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়া হয়। সালিশের আয়োজক বাজার কমিটির সভাপতি ডলার এবং এলাকার প্রধান আফজাল মৃধাকে এই সালিশ বৈঠকের আয়োজন এর এখতিয়ার আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, থানা থেকে তাদের এই সালিশ করার জন্য বলা হয়েছে।
তাই তারা স্থানীয় ভাবে মীমাংসার জন্য এটার আয়োজন করেন। এ ব্যাপারে নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, মাছ চুরির ব্যাপারে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি এবং থানা কাউকে বিচার সালিশ করার অনুমতি প্রদান করেনি। এদিকে চন্দনের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্যে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।। চন্দনের বাবা-মা চন্দন এর মরদেহ নিয়ে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে থাকায় তার প্রতিক্রিয়া নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সচেতন মহল হতাশা ব্যক্ত করে জানান, এভাবে গ্রাম্য সালিশ করে মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে। সেই সাথে এই কিশোরের চিকিৎসার দায়িত্ব কেউ না নেয়ায় প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে রাজশাহীতে প্রেরণ করার মতো কোনো এম্বুলেন্স যোগাড় করতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক।