আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু আর নেই। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিত্সাধীন অবস্থায় বুধবার বিকালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল মতিন খসরুর ১৬ মার্চ পাওয়া রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। ঐ দিনই তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ১ এপ্রিল তার করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ এপ্রিল তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) সংসদীয় আসন থেকে পাঁচ বারের সংসদ সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও আইন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সর্বস্তরের মানুষের চোখের পানি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন আবদুল মতিন খসরু। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বাসভবনের সন্নিকটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে ও নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এবং ঐ উপজেলার মীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাদ আসর পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় তাকে দাফন করা হয়েছে। প্রতিটি জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।
জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বিল উত্থাপনকারী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা বিচারে আবদুল মতিন খসরুর ভূমিকা জাতি সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ও জনমানুষের নেতা হিসেবে মতিন খসরু চিরদিন মানুষের হূদয়ে বেঁচে থাকবেন। দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার উত্তরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচার কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী শাহজাহান কামাল এমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক ও উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
জেপির শোক আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম। শোকবার্তায় নেতৃদ্বয় বলেন, আবদুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকার সময়ে জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সুগম করেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, পাঁচ বারের সংসদ সদস্য ও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং একজন সত্ রাজনীতিবিদকে হারাল। নেতৃদ্বয় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
একজন আইনজীবী হিসেবে শতভাগ পেশাদার ছিলেন আবদুল মতিন খসরু। কুমিল্লা জজ কোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিসে সাফল্য অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন। তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবদুল মতিন খসরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সুত্রঃ ইত্তেফাক