নাটোরের গুরুদাসপুরে মারধর করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে দুটি সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গা জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এব্যাপারে কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগীরা। থানায় মামলা হলেও নেয়া হয়েছে মিমাংসার উদ্যোগ। এতে সন্তুষ্ট নন ভুক্তভোগী জমির মালিক সলকি রাণী ও হীরামতি।
সলকি রাণী ও হীরামতির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত কালিপদ হালদারের স্ত্রী সলকি রানীর ২২ শতাংশ এবং প্রতিবেশী হিরা মতির ২০% আবাদি জমি রয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল বুধবার পার্শ্ববর্তী সিংড়া উপজেলার শালিকা গ্রামের আসাদ, মোজাম, শাজাহান, আরিফসহ প্রায় ৪০/৫০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নন্দকুজা নদী থেকে শ্যামপুর মৌজা আবাদি জমিতে পানি সেচের জন্য জমিতে লাগানো লেবু বাগান জোরপূর্বক উপড়ে ফেলে মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ শুরু করে। এ সময়ে উক্ত গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান নিতাই পদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সলকি রানি ও হীরামতি বাধা দিতে গেলে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং পাইপ বসানোর কাজ করতে থাকে। পাশাপাশি ওই জমিতে একটি সেচের পাম্প বসানোর ঘর নির্মাণের হুমকি দেয় তারা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করাসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর ঘটনার প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ঘটনার ১০দিন পর কোন প্রতিকার না পেয়ে সংখ্যালঘু প্রধান নিমাই পদ এই প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার সময় আমি তাদেরকে নিষেধ করতে গেলে তাদের মধ্যে শাজাহান নামে একটা ছেলে কোদাল নিয়ে আমাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। সলকি রাণীকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়, যারাই প্রতিবাদ করতে গেছে তাদের দিকেই তারা লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে গেছে মারার জন্য। এতে সংখ্যালঘু মানুষ তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভয়ে কেউ আর কিছু বলতে পারেনি। যাদের জমি তারা অত্যন্ত দরিদ্র তাদের এই জায়গা টুকুর ছাড়া আর কোনও জায়গা নেই। বাস করার জন্য এবং চাষ বাস করার জন্য এই জায়গাটাই তাদের সম্বল। মামলা করার পর ওসি সাহেব ঘটনাটা মিমাংসা করার উদ্যোগ নিলে আমরা রাজি হইনি। মামলার পরদিন আমরা বিষয়টা এমপি সাহেবকে জানাই। এমপি সাহেব বলেছেন তিনি ব্যাপারটা দেখবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে নিমাই পদ বলেন, সেদিন যদি আমরা মৌখিকভাবে বাধা না দিয়ে আর একটু জোর করতাম তাহলে সেখানে রক্তারক্তি হয়ে যেতো কেননা, আসাদের লোকজন সেদিন প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। এতো বড় ঘটনা তো মিমাংসা হতে পারেনা। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি, আইনী সমাধান হোক এবং হুমকিদাতাদের প্রচলিত আইনে শাস্তি হোক আর অসহায় দুই মহিলার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হোক এটাই আমরা চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই আসাদের ভাড়া করা লোকজন এই ড্রেন নির্মান করার বাধা দেওয়ার জন্য আমাদের উপরে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং মারতে আসে। আমরা প্রাণের ভয়ে কিছু করতে পারছিনা।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার জন্য ডেকেছিলাম। কিন্তু বিবাদী পক্ষ উপস্থিত হলেও বাদী পক্ষ না আসায় আমাদের পক্ষে এ ব্যাপারে আর এগোনো সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন ব্যাপরটা তিনি দেখবেন।