কেমিস্ট্রি বুঝি নাই তাই ভালো রেজাল্ট করেছি
—বিদ্যুৎ কুমার রায়
১. আমি কেমিস্টির ছাত্র কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না যে কাঠের মধ্যে পরমানু রয়েছে, লোহার মধ্যে পরমাণু রয়েছে আবার এই পরমানুর মধ্যে একটি কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রের মধ্যে প্রোটনও রয়েছে ইলেকট্রন আবার কেন্দ্রের বাহির দিয়ে বিভিন্ন পথে ঘুরতেছে। এই ঘুড়তে থাকা আমি দেখি নাই তাই এটা আমি বিশ্বাসও করি নাই। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষায় লিখে পাশ করতে হবে আর পাশ করলেই চাকরি। চাকুরী করলেই মাসে মাসে টাকা। তাই বিজ্ঞানীরা যা বলেছে তা কোন রুপ চিন্তা না করে ঝাড়া মুখস্ত করে ফেলেছি। বোঝাবোঝির কোন চিন্তাই করি নাই। পরীক্ষায় এসেছে, লিখেছি। অনেক মার্ক পেয়েছি। আর এ বিষয়ে নবম দশম শ্রেণির পাঠ্যবইও লিখে ফেলেছি। মুখস্ত করা একজন মানুষ নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই লিখেছে সেটা নাকি সৃজনশীল এবং ছাত্র ছাত্রী নাকি সেটা বুঝে বুঝে সৃজনশীল আকারে পড়তেছে। কি অদ্ভুত এই বাংলাদেশ।
২. কেমিস্ট্রির যত জটিল বিষয়ই থাকুক না কেন এই যেমন বর্ণালীমিতি, সিমেট্রি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বিজ্ঞানীরা যা বলছেন তাই আমি মুখস্ত করেছি। আমি যখন পড়া মুখস্ত করতাম তখন আমার শুধু মনে হতো কেমিস্ট্রি একটা ভুয়া সাবজেক্ট। কোনদিন ইলেকট্রন দেখি নাই। বিজ্ঞানীরা যা দেখেছে এবং যা বলেছে তাই বিশ্বাস করে নিচ্ছি। আমি তাদের কথা বিশ্বাস না করে যদি আমার কথা লিখতাম তাহলে তো মার্ক পেতাম না। তাই বইয়ে যা লেখা আছে তাই লিখে দিছি। এজন্য কেমিস্ট্রি আমার কাছে খুবই সহজ লেগেছে।
৩. আজকাল দেশটা এমন অবস্থায় গেছে সবাই দেখি বুঝতে চায়। আমি বলি আরে ভাই বুঝে কি লাভ। পৃথিবীতে দু একজন মানুষ বুঝলেই তো হলো। আভোগেড্রো আমার প্রিয় বিজ্ঞানি। আমার এই ব্যক্তিকে এতটাই পছন্দ এ কারনে যে তিনি সুন্দর একটা সংখ্যা দিয়েছেন 6.023*10 to the power23. এই সংখ্যা তিনি কিভাবে দিয়েছেন কোটি কোটি বিজ্ঞানি চিন্তা করেও কোন উত্তর পায় নাই। সবাই যখন চিন্তা করেছেন তখন আমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাইয়েছি। কারন আমি জানতাম এসব চিন্তা করে কোন লাভ নেই। তিনি যে সংখ্যা দিয়েছেন তা মুখস্ত করে ফেলি। অনেক পরিশ্রম করে যদি ফল না পাই তবে সেই পরিশ্রম আমি করব কেন?
৪. আমাকে অনেকে বলেন স্যার আপনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। আমি যেহেতু রসায়ন পড়েছি। এই রসায়ন বইটাই আমাকে শিখিয়েছে যে উদ্যোগ নিয়ে কোন লাভ নেই। বিজ্ঞানীরা যা তৈরি করেছেন তাই পড়ে যাই তাতেই শান্তি। আজকাল একটা বাজে ট্রেন্ড এসেছে তা হলো বিসিএস পরীক্ষার যারা প্রিপারেশন নেয় তারা অনেকেই অনেক কিছু বুঝতে চায়। আমি বলি, আরে ভাই প্রফেসর জব সলুশান বই এর দাড়ি কমা, সেমিকোলনসহ বইয়ের সব লাইন মুখস্ত করেন। বিসিএস চাকুরী নিশ্চিত। আপনি যদি এই বইটা ১০ বার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্ত করেন তাহলেই এই বইটার লেখাগুলো মনে থাকবে। একবার পড়ে যেন বলেন না, ভাই/ স্যার আমার তো মনে থাকতেছে না। কি করি। দয়া করে দশবার রিভিশন না দিয়ে মুখস্ত করে কেন মনে থাকছে না এ নিয়ে আমার কাছে কোন প্রশ্ন তুলবেন না। কেউ দুধ বেচে ঘোল খায় কেউ ঘোল বেচে দুধ খায়। খাবারে এ খুধা মিটলেও হলো। কেউ বিসিএস জব সলুশান বই মুখস্ত না করেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। আবার আমার মত অনেকেই শুধু প্রফেসর জব সলুশান বই মুখস্ত করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। যারা প্রফেসর জব সলুশান বই মুখস্ত না করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন সেসব ব্যক্তির ব্রেন আআইন্সটাইন, নিউটনের মত। দয়া করে এসব ব্যক্তির কথা এখানে আলাপ করেন না। আমার মত মুখস্ত ব্রেনের গাবাগোবা মানুষের সাথে তাদের মত এক্সটা অরডিনারি ব্রেনের তুলনা করা নিতান্তই বোকামি। আমার ব্রেন যেহেতু হাবাগোবা ধরনের তাই আমি লিখিও হাবাগোবা ধরনের। এজন্য এক্সট্রা অর্ডিনারী ব্রেনের মানুষ আমার লেখা বুঝতে পারে না। সবাইকে ধন্যবাদ।
বিদ্যুৎ কুমার রায়
সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন
২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা, নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক।