সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবনের আইসিইউডিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সপ্তাহব্যাপী মৃত্যু সংবাদ নিয়ে ধুম্রজালের পর অবশেষে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার(২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান বলে জানান হাসপাতালের পরিচালিক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানি।
তিনি বলেন, গত সোমবার(১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জীবনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার(২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান।
জামিউল ইসলাম জীবন নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলি গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন এবং নলডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র।
জীবনের চাচা উপজেলা অওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এসএম ফিরোজ বলেন, তাদেরকে শুক্রবার সোয়া দুটার দিকে ভাতিজা জীবনের মৃত্যুর বিষটি নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন,আইসিইউতে লাইফ সার্পটে থাকা আমার ভাতিজা জামিউল আলীম জীবনকে বুধবার(২১ সেপ্টেম্বর) সকালে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানান জীবন মারা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবারও আইসিইউতে নেয়া হয় এবং লাইফ সার্পট দেয়া হয়। পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের জানানো হয় জীবন জীবিত থাকায় তাকে লাইফ সার্পটে রাখা হয়েছে। আরও ৭২ ঘন্টা লাইফ সার্পটে থাকবে। এধরনের নাটক শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে আমার ভাতিজার জীবনাবসানের সংবাদটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন চলছে ময়না তদন্তের কার্যক্রম। ময়না তদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জেনেছি। ময়না তদন্ত শেষে আরও কোন নাটকের অবতারনা হতে পারে বলে শংকায় রয়েছি।
উল্লেখ্য,ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনিতে আহত হন জামিউল ইসলাম জীবন ও তার পিতা ফরহাদ হোসেন। দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জামিউল ইসলাম জীবকে আইসিইউতে লাইফ সার্পটে রাখা হয়। এই দিনই জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদেরও জানানো হয় জীবনের মৃত্যুর সংবাদ। এতে বেশ কিছু গণমাধ্যমে জীবনের মৃত্যুর খবর প্রচার বা প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার(২০ সেপ্টেম্বর) দিনভর জামিলের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী সহ উপজেলা আওয়ামীলীগ ,ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা চেয়ারম্যান আসাদকে গ্রেফতার ও তার বিচারের দাবীতে নলডাঙ্গা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিরুদ্ধে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলে ফেসবুক লাইভ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জামিউল ইসলাম জীবন। এর জের ধরে পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান আসাদুজ্জামান আসাদ, ও তার দুইভাইসহ ৫ জন। এ সময় বাধা দেওয়ায় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেনকেও পেটানো হয়। আহতদের উদ্ধার করে রাতেই প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরেরদিন ফরহাদ হোসেনকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনকে পাঠানো হয় আইসিউতে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরেই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার ২ ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলা দায়েরের পরদিন পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই আলিম আল রাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে ৪দিন পর জীবনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আত্মীয় ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা নিহত জীবনের বাড়ি রামশার কাজীপুর আমতলি গিয়ে ভির করছেন।
নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে আজ শুক্রবার বিকেলে রামশার কাজীপুর আমতলি গ্রামে যাওয়ার কথা রয়েছে ।
নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শফিকুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যানের পিটুনীতে আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে লাইফ সাপর্টে থাকা জীবনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোন ধরনের বিশৃংখলা ঠেকাতে পুলিশ সর্তক রয়েছে।