ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গভীর রহস্যজনক এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ইতিমধ্যেই শাকিলের হত্যাকারী স্ত্রী মিম ও শাকিলের ছোট ভাই সাব্বিরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। সাব্বির বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
ঈশ্বরদীতে তরুণ কাপড় ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু!
জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন মালিথার ছেলে ঈশ্বরদী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল মালিথা গত ২৮ মে’২১ রাতে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার কলেজ পাড়া রূপনগর মহল্লায় জনৈক আহসান হাবিবের বাড়ির দোতালায় নিজ বাসাতে রহস্যজনকভাবে নিহত হয়। বিষয়টি জানাজানির পরে তার স্ত্রী মিম স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে নাটকীয় কথা বার্তা বলতে থাকে। নিহত স্বামীর লাশের পাশে বসে থেকে সে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন দূর্বৃত্ত এসে শাকিলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাকিলের লাশ উদ্ধার করে পাবনা মর্গে ময়নাতদন্ত করায় এবং শাকিলের স্ত্রী মিম সহ সম্ভাব্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি অত্যান্ত ঘোলাটে মনে হয়।
এব্যাপারে শাকিলের মামা মোঃ কুরবান আলী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করার পর পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম’র নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ মাসুদ আলম ও ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ কবিরের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম সহ পুলিশের একটি চৌকস দল রহস্য উদঘাটনে মরিয়া হয়ে কাজ শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও উল্লেখিত ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে শিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
জবানবন্দিতে তারা অকপটে স্বীকার করে যে, গ্রামের বাড়িতে থাকা অবস্থায় মিম আর সাব্বির পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়টি শাকিল জানার পরে তাদেরকে এধরনের জঘন্য অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলে। এর পরেও তারা সংযত না হওয়ায় গত ১৯ মে(২০২১ইং) স্ত্রীকে নিয়ে ঈশ্বরদীর ভাড়া করা বাসায় ওঠে শাকিল। এখানে আসার পরও তাদের পরকিয়া চলতে থাকে। সাব্বিরের কিনে দেয়া মোবাইল ফোনে গোপনে তাদের প্রেমলীলা চলতে থাকে। এ বিষয়টিও শাকিল বুঝতে ও জানতে পারে বিধায় স্ত্রীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে চলে গেলে মিম এবং সাব্বির শাকিলকে কৌশলে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৭ মে’২১ রাতে মিম পানির সাথে পাওয়ারফুল ঘুমের বড়ি মিশিয়ে শাকিলকে খায়িয়ে দেয়। শাকিল রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পড়ে পরের দিন ঘটনার আগ পর্যন্ত বিভোরে ঘুমিয়ে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ মে’২১ সন্ধ্যার পরে সাব্বির শাকিলের বাসায় যায় এবং সোফাসেটের কুশুন বালিশ নিয়ে শাকিলের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক মুখে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কেউ যাতে মিমকে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য শাকিলের পাঞ্জাবি ও মিমের ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে বাইরে দরজায় সিটকিনি দিয়ে হত্যাকারী চলে যায়। পুলিশ তাদের ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করেছে। এই হত্যাকান্ডে আরও কোন আসামী জড়িত আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাব্বিরকে চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গতকাল পাবনা পুলিশ সুপারের দেয়া প্রেস ব্রিফিং-এ উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।