আজ ১৩ ডিসেম্বর নাটোরের লালপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ৭১’ এর এই দিনে পরাজিত পাক হানাদার বাহিনী লালপুর থেকে বিতাড়িত হয়। এই দিবসটি পালন উপলক্ষে লালপুরের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের উপর আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধা সংসদের আয়োজনে সকালে উপজেলা ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হল রুমে’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পদযাত্রা, র্যালী ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
নাটোর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রউফ জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয় নাটোরের লালপুর উপজেলার দুর্গম ময়না গ্রামে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীর ২৫নং রেজিমেন্ট নগরবাড়ি হয়ে নাটোরে আসার পথে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এই দলের সদস্যরা পথ ভুলে লালপুরের ময়না গ্রামে ঢুকে পড়ে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন মুহুকুমা শহর নাটোরসহ আশেপাশের কয়েকশ মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা ওই গ্রাম ঘিরে ফেলে। দু’দিন ধরে চলে যুদ্ধ। যা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং তাদের রেজিমেন্ট ধংস হয়। যুদ্ধে ৯ পাক সেনা নিহত হয়। তবে এদিন প্রায় ৪২ জন বাঙ্গালী শহীদ হন।
তিনি আরও জানান, পাকিস্তানী সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। পরবর্তীতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা লালপুর থেকে পালিয়ে যায়। ফলে ১৩ ডিসেম্বর থেকে লালপুর পাকহানাদারমুক্ত হয়
জানা যায়, ১৯৭১সালে ১৭ এপ্রিল দুয়ারিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮জনকে গুলি করে হত্যা করে। ৩০ মার্চ ময়না সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তি বাহিনী হানাদারদের ২৫ নং রেজিমেন্ট ধ্বংস করে হয়। সেই দিন প্রায় ৮০জন শহীদ হন ও ৩২জন আহত হয়। ১২ এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজের নিকট প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০/১২জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৫ মে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেডের এলাকা ঘেরাও করে মিলের প্রশাসক সহ দুই’শ শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চিনিকলের এলাকায় পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তাদের হত্যা করে পাকবাহিনী বলে জানা গেছে।
২৯মে খান সেনাদের একটি দল চংধুপইল পয়তারপাড়া গ্রামে নদীর পাড়ে ৫০জনেরও অধিক নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। ২৫ জুলাই বাথান বাড়ীতে ৬/৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। ১৩ ডিসেম্বর খান সেনারা ঝটিকা আক্রমন করে মহেষপুর গ্রামে ৩৬ জনকে গুলি করে পাক সেনারা পালিয়ে যায়। এর মাধ্যমে পাক হানাদার মুক্ত হয় লালপুর। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে লালপুরে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল, সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।